‘মা কবরে ঘুমাচ্ছে, রাতে আমার কাছে আসবে’

মাকে হারানোর তিনদিন পার হলেও এখনো ফেরার অপেক্ষায় চার বছরের নূর মাহিম। প্রতিদিনের মতো মা অফিসে রয়েছেন বলেও বিশ্বাস তার। তবে মাঝে মধ্যেই বলে বেড়াচ্ছে ‘মা মাটির নিচে (কবরে) ঘুমাচ্ছে, রাতে আমার কাছে আসবে’। এভাবেই পার হচ্ছে ছোট্ট মাহিমের দিন।

এমনকি মায়ের সব কাপড় আলমারিতে রেখে দিয়েছে চার বছরের এ শিশু। মায়ের এসব কাপড় দেখলেই কান্না পায় তার। ২৪ জুলাই সকালে মাহিমের মা রহিমা খাতুনের প্রাণ কেড়ে নেয় একটি ট্রেন। এ ঘটনায় আরো তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৫ জন।

রহিমা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া এলাকার জুলহাস উদ্দিনের স্ত্রী। মাহিম তাদের একমাত্র সন্তান। রোববার রাতেই আধা কিলোমিটার দূরে পুরোনো বাড়ির পাশে রহিমাকে কবর দেওয়া হয়।

শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামে ট্রেনের ধাক্কায় বাসে থাকা চারজন নিহত হন। দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ি এলাকার জামান ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিক বহন করে কারখানায় নিয়ে যাচ্ছিল।

রহিমার স্বামী জুলহাস বলেন, রহিমাকে আমরা প্রিয়া নামে ডাকতাম। আট বছর আগে তাকে ভালোবেসে বিয়ে করি। প্রিয়ার পরিবারের কেউ জানতেন না। বিয়ের খবর শেনার পর এ আট বছরে স্বজনদের কেউ একদিনও তাকে দেখতে আসেনি। শ্বশুর-শাশুড়ি ও বাড়ির লোকদের একান্ত আপন করে নিয়েছিল। ২৪ জুলাই দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর শুনে মেয়েকে দেখতে ওই দিনই এসেছিলেন তার মা।

আমার ছেলেটার একটা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে চাকরি নিয়েছিল প্রিয়া। ছেলেটার ভবিষ্যতের আগেই সে চলে গেল। সংসারটা চালাতো সেই-ই। আমার সংসার অনেক কষ্টে চলতো। আমার চাকরি ছিল না। সেই তখন চাকরি করতো। চাকরিতে গিয়ে সে ফিরে আসবে না এমন জানলে তাকে চাকরি করতে দিতাম না।