অনন্ত জলিল ও অনন্য মামুনের দ্বন্দ্বের কারণ বলিউডের নায়িকা

ঈদে সিনেমা মুক্তিকে কেন্দ্র করে অনন্ত জলিলের সঙ্গে নির্মাতা অনন্য মামুনের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। অনন্তর সিনেমার ১০০ কোটি টাকা বাজেট নিয়ে নির্মাতা অনন্য মামুনের সমালোচনার প্রেক্ষিতে একটি টেলিভিশন টকশো-তে অনন্ত জলিল বলেন, অনন্য মামুনকে আমি ডিরেক্টর বানিয়েছি। আমার টাকায় ওর ডিরেক্টর ফি (পরিচালক সমিতির সদস্য পদ) দিয়েছি ১ লাখ ৬ হাজার টাকা। অনন্ত জলিলের সমালোচনা করার মতো তোমার (অনন্য মামুন) কী যোগ্যতা আছে? সামনে পেলে ওকে আমি কান ধরে ওঠ-বস করাব।
এবার জলিলের বক্তব্যের বিস্তারিত জবাব দিয়েছেন মামুন। ফেসবুকে দীর্ঘ একটি পোস্টে জানিয়েছেন, কী কারণে তার সঙ্গে অনন্ত জলিলের ঝামেলার সূত্রপাত হয়।

অনন্ত জলিলের অন্যতম সফল সিনেমা ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ পরিচালনা করেছিলেন অনন্য মামুন। এটি মুক্তি পায় ২০১২ সালে। এই সিনেমার টাইটেল গানে পারফর্ম করেছিলেন বলিউডের নায়িকা স্নেহা উল্লাল। মামুনের দাবি, এই স্নেহাকে ঘিরেই তার সঙ্গে জলিলের সমস্যার সূত্রপাত।

মামুন তার পোস্টে লিখেছেন, আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞতা জানাই অনন্ত ভাইকে, আমাকে তার সিনেমায় প্রথম পরিচালক হিসেবে সুযোগ দেওয়ার জন্য। শুটিংয়ে আমার সাথে প্রথম ঝামেলা শুরু হয় মুম্বাইয়ের নায়িকা স্নেহা উল্লালকে নেওয়ার পর থেকে। অনন্ত ভাইয়ের সাথে বর্ষা ম্যাডামের সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছিল। অনন্ত ভাই বাইরের নায়িকাকে নিয়ে কাজ করবেন, বর্ষা করতে দেবেন না। ফাইনালি তাদের সম্পর্ক ঠিক হলো, আমি ভিলেন হয়ে গেলাম।’

বলে রাখা প্রয়োজন, স্নেহা উল্লালের বলিউড ক্যারিয়ার শুরু হয় সুপারস্টার সালমান খানের হাত ধরে। তারা জুটি বেঁধে ‘লাকি’ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন।

স্নেহাকে ঘিরে তৈরি হওয়া সমস্যা গড়ায় গালাগালির পর্যায়েও। অনন্য মামুন জানান, তার বাবা-মাকে নিয়ে গালি দিয়েছিলেন অনন্ত জলিল। এ কারণে তিনি জলিলের সঙ্গ ছেড়ে আসেন।

শনিবার (৯ জুলাই) দেওয়া ফেসবুক পোস্টে মামুন লিখেছেন, অনেক চুপ ছিলাম। দেখলাম চুপ থাকা মানে মিথ্যাটাকে অন্যায় হিসেবে মেনে নেওয়া। সত্যটা বলা দরকার। অনন্ত সাহেবের সাথে আমার পরিচয় ২০১০ সালের দিকে। আমি তখন কলকাতায় রেগুলার গল্প লেখক হিসেবে এসকে মুভিজের সাথে কাজ করি। স্প্ল্যাশ ম্যাগাজিনের বাবুর সাথে আমার আগে থেকেই চেনাজানা ছিল। বাবু আমাকে হোটেলে ডাকল, অনন্ত ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো। বাংলাদেশের ছেলে কলকাতায় কাজ করি শুনে উনি অনেক খুশি। আমি ল্যাপটপে গল্প লিখি, ব্যাপারটা উনার মনে ধরে। বললেন দেশে এসে আমার সাথে মিট করবেন। অনন্ত ভাইয়ের একটা ভালো গুণ, আছে উনি ছোট-বড় সবাইকে আপনি করে বলেন।

মামুন আরও লিখেছেন, সোহান ভাইয়ের সাথে আমার জুটি হিট। আমার দেওয়া সবগুলো গল্প হিট। ‘কথা দাও সাথী হবে’, ‘আমার জান আমার গান’, ‘পরাণ যায় জ্বলিয়ারে’, ‘কোটি টাকার প্রেম’, ‘সে আমার মন কেড়েছে’, ‘এক মন এক প্রাণ’। সোহান ভাই অনন্ত ভাইয়ের সিনেমা ‘দ্য স্পিড’ লেখার জন্য তার অফিসে নিয়ে গেলেন। তার সাথে আমার দ্বিতীয় দেখা। এরপর তার সাথে আমার কাজ শুরু হলো। আমার কাজের দক্ষতা দেখে অনন্ত ভাই বললেন, আমাকে শুটিংয়ে থাকতে হবে। আমি এত কিছু ম্যানেজ করতে পারব না। শুটিংয়ের প্ল্যান অনন্ত ভাইয়ের সাথে থেকে আমি শুরু করলাম। ক্যামেরা লোকেশন, শিল্পী সব কিছু। তখন থেকেই আমি সোহান ভাইয়ের চোখে ভিলেন হয়ে গেলাম।

অনন্তকে নিয়ে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে মামুন লেখেন, সবাই শুটিং শেষ করে দেশে ফেরে। আমি আর অনন্ত ভাইয়ের অফিসের লোক ব্রুসলি এক সপ্তাহ পরে ফিরে আসি। কারণ তখন নেগেটিভে শুটিং হতো। টেলিসিনিং করে ফাইট এডিট করে আমি দেশে ব্যাক করি। মজার ব্যাপার হলো, অনন্ত ভাইয়ের সিনেমার খরচ তার অফিসের লোক দেখাশোনা করে। পরিচালক বা অন্য কারো হাতে টাকা দেওয়া হয় না। মালয়েশিয়া হিসাবে তার লোক ২৩ লাখ টাকা বেশি দিয়ে আসে, আমি পরে হিসাব বের করে তাকে টাকাটা ব্যাক করে দিই। সেদিন উনি বলেছিলেন, আপনি আমার ছোট ভাই।

গালি প্রসঙ্গে মামুন লিখেছেন, ‘মোস্ট ওয়েলকাম-২’ সিনেমার দেশের বাইরের সব শুটিং আমি পরিচালনা করেছি। নাজিম শাহরিয়ার জয়, মিশা ভাই, ডন ভাই উনারা ব্যাপারটা ভালো করেই জানেন। দেশে আসার পর যখন কথায় কথায় একদিন অনন্ত ভাই আমার বাবা-মাকে জড়িয়ে একটা গালি দেন, ওই দিন চলে এসেছি। আপনার পাশের লোকজন টাকার জন্য আপনাকে হুজুর হুজুর করতে পারে, আমি না।