যেসব অভিযোগে পরীমনির বিরুদ্ধে মামলা করলেন নাসির

ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ব্যবসায়ী ও বোট ক্লাবের সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদ। বুধবার তার বিরুদ্ধে ভয়ভীতি, ভাঙচুর, হত্যাচেষ্টা ও মারধরের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে বলে জানা যায়।

ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর বাবুল গণমাধ্যমে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসানের আদালতে বোট ক্লাবের সভাপতি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।

এদিন বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। শুনানি শেষে আদালত মামলার বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১৮ জুলাই নির্ধারণ করেছেন।

এদিকে, মামলায় নাসির উদ্দিন উল্লেখ করে বলেন, পরীমনি ও তার সহযোগীরা অ্যালকোহল সেবনে অভ্যস্ত। তারা সুযোগ বুঝে বিভিন্ন নামিদামি ক্লাবে ঢুকে অ্যালকোহল পান করেন এবং পার্সেল নিয়ে মূল্য পরিশোধ করেন না। পরীমনি তার পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে মিথ্যা মামলা করিয়ে হয়রানির ভয় দেখান। ২০২১ সালের ৯ জুন রাত ১২টার পর আসামিরা সাভারের বোট ক্লাবে ঢুকে এবং দ্বিতীয়তলার ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। পরে তারা ক্লাবের ভেতরে বসে অ্যালকোহল পান করেন।

এতে আরো বলা হয়, বাদী (নাসির উদ্দিন মাহমুদ) ও তার সহযোগী শাহ শহিদুল আলম রাত ১টা ১৫ মিনিটে যখন ক্লাব ত্যাগ করছিলেন তখন পরীমনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে নাসিরকে ডাক দেন। তাদের সঙ্গে কিছু সময় বসারও অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে পরীমনি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নাসিরকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন এবং একটি ব্লু লেবেল অ্যালকোহলের বোতল বিনামূল্যে পার্সেল দেওয়ার জন্য চাপ দেন। নাসির উদ্দিন এতে রাজি না হওয়ায় পরীমনি তাকে গালমন্দ করেন। নাসির এবং আসামিদের মধ্যে বাদানুবাদের একপর্যায়ে পরীমনি বাদীর দিকে একটি সারভিং গ্লাস ছুড়ে মারেন এবং হাতে থাকা মোবাইল ফোনও ছুড়ে মারেন। এতে নাসির মাথায় এবং বুকে আঘাতপ্রাপ্ত হন।

বাদী মামলায় আরো উল্লেখ করেন, পরীমনি ও তার সহযোগীরা তাকে (নাসির উদ্দিনকে) মারধর ও হত্যার হুমকি দিয়েছেন ও বোট ক্লাবে ভাঙচুর করেছেন। এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরীমনি সাভার থানায় বাদী নাসির উদ্দিনসহ দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে মামলা করেন।

এর আগে, ২০২১ সালের ১৪ জুন ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে এবং চারজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে পরীমনি ঢাকার সাভার থানায় মামলা করেন। ঐ বছরের ৬ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নাসিরসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন।

গত বছরের ১৮ মে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯-এর বিচারক হেমায়েত উদ্দিন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১ আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের সময় নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন নাসিরসহ তিন আসামি। তবে দুই মামলায় ২ সপ্তাহ কারাভোগের পর গত বছর কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৩০ জুন রাত ৮টার দিকে মুক্তি পান তারা।

প্রসঙ্গত, গত বছর চিত্রনায়িকা পরীমনির করা ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিনের পর পাল্টা মামলা করবেন বলে জানিয়েছিলেন ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ।

এ প্রসঙ্গে তখন তিনি গণমাধ্যমে তখন জানান- মিথ্যা অপবাদ, সম্মানহানি করা, পারিবারিকভাবে অপদস্থ করাসহ বেশ কিছু বিষয়ে চিত্রনায়িকা পরিমনির বিরুদ্ধে মামলা করব।

নাসির ইউ মাহমুদ আরো বলেছিলেন, মামলা করার জন্য প্রস্তুত আমি। তবে কখন করব কীভাবে করব এটা আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করেই করব। আপনারা জানেন আমার সম্পর্কে যে ধরনের অভিযোগ করেছেন সবই মিথ্যা, পারিবারিকভাবে আমাকে হয়রানি করা হয়েছে। মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগের কারণে আমার দীর্ঘদিনের অর্জিত মান-সম্মান সবকিছুই মিশে গেছে।