বিরক্ত হয়ে কঠিন সিদ্ধান্তের কথা জানালেন ডিপজল

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ ও বিরক্ত একসময়ের ভয়ংকর খল অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তারকা শিল্পীদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক দিন দিন যে হীন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, এ জন্য তিনি মর্মাহত। এমন পরিস্থিতিতে জীবনের একটি কঠিন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন এই অভিনেতা ও প্রযোজক। ডিপজল জানিয়েছেন, শিগগিরই তিনি চলচ্চিত্রকে বিদায় জানাবেন।

এবারের চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আগে থেকে শুরু করে অভিনয়শিল্পীদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। একটি পদ নিয়ে জায়েদ খান এবং চিত্রনায়িকা নিপুণের লড়াই উচ্চ আদালতে পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এখন আবার জায়েদ খান, ওমর সানী ও মৌসুমীর ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব নিয়ে গোটা চলচ্চিত্র জগৎ সরগরম।

এসব উল্লেখ করে বিরক্তির সুরে ডিপজল বলেছেন, ‘শিল্পীদের ভাবমূর্তি বলে আর কিছুই অবশিষ্ট নাই। এক নির্বাচনে ধ্বংস হয়ে গেছে ৯৯ ভাগ। এক পারসেন্ট বাকি ছিল, সেটাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। এসব নিয়ে আর কিছু বলার নেই। আমার আর দুই-তিনটা ছবির গল্প আছে। সেগুলো শেষ করার পর চলচ্চিত্রকে বিদায় জানাব। ভেবেছিলাম মরণের আগের দিন পর্যন্ত সিনেমা বানাব, ফিল্মের পাশে থাকব, অভিনয় করে যাব। তা আর মনে হয় হচ্ছে না। বড়জোর তিনটা ছবি করতে পারি। এরপর সিনেমাকে গুডবাই।’

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি কখনোই এত নোংরামি দেখেননি উল্লেখ করে ডিপজল হতাশার সুরে বলেন, ‘চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচানোর জন্য সিনেমা বানিয়েছি। কোনো দিন লাভের কথা ভাবিনি। চেষ্টা করেছি, সিনেমা যেন ভালো জায়গায় থাকে। কিন্তু সেই চেষ্টার কোনো মূল্যায়ন পেলাম না। তাই এখানে থাকব না। তবে আমি থাকি না থাকি, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভালো চাই।’

শিল্পী সমিতির দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করে ডিপজল বলেন, ‘কে চেয়ারে বসবে, কে ক্ষমতা দেখাবে, এই নিয়ে এখন শিল্পী সমিতিতে মারামারি হয়। শিল্পী সমিতি টিকবে কী দিয়ে। ছবি না থাকলে না খেয়ে শিল্পী সমিতির অফিসে বসে থেকে লাভ কী। কেউ সিনেমা বানানোর ঘোষণা দিচ্ছে না। উল্টো চাচ্ছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে ধ্বংস করা যায়। কিন্তু সিনেমা হোক, এটা কোনো একটা পক্ষ চাচ্ছে না।’

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে ছিল ডিপজলের ছেলের বিবাহোত্তর সংবর্ধণা। চলচ্চিত্রের অনেক তারকাই ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন। গিয়েছিলেন ওমর সানী এবং জায়েদ খানও। মৌসুমীকে বিরক্ত করার অভিযোগে সেখানেই জায়েদ খানকে সবার সামনে চড় মেরে বসেন ওমর সানী। এরপর জায়েদ খান নাকি কোমর থেকে পিস্তল বের করে ওমর সানীকে গুলি করার হুমকি দেন।

এ ঘটনার এক দিন পর জায়েদ খানের বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন ওমর সানী। তাকে সমিতি থেকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন। অভিনেতা বলেন, ‘জায়েদ খানের মতো একজন অস্ত্রধারী সমিতির সদস্য থাকতে পারে না।’

তবে এ ঘটনায় স্বামীর বিপক্ষে গিয়ে জায়েদ খানের পক্ষে কথা বলেছেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। তিনি সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক অডিও বার্তায় জানান, জায়েদ খান তাকে কোনো ভাবে বিরক্ত বা অসম্মান করেননি। বরং তাকে বড় বোনের মতো সম্মান করেন। জায়েদ খানকে ভালো ছেলে উল্লেখ করে মৌসুমী বলেন, ওমর সানী মিথ্যাচার করছেন। এছাড়া স্বামীকে ভাই বলেও সম্মোধন করেন ‘প্রিয়দর্শিনী’।

তবে বাবার পক্ষ নিয়ে ওমর সানীর ছেলে ফারদিন এহসান স্বাধীন গণমাধ্যমে দাবি করেছেন, ‘জায়েদ খান শুধু আম্মুকে না, চলচ্চিত্রের অনেককেই বিরক্ত করে। এই বিষয়গুলো আমি জানি। জায়েদ খান আমার ব্যবসায়েরও ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন।’ জায়েদ খানকে তিনি রাস্তার ব্যাঙের সঙ্গেও তুলনা করেন। এই গোটা ঘটনায় কতটা বিরক্ত এবং হতাশ হয়েছেন, সেটাই প্রকাশ করেছেন ডিপজল।

সূত্র : ঢাকাটাইমস