‘৪ দিনের ছুটি পেয়েছি মা, বেতন পেলেই আসবো’

দুর্ঘটনার দিন শনিবার (৪ জুন) সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ মুঠোফোনে শেষ কথা হয় মায়ের সাথে হাবিবুরের। মায়ের সাথে কথা বলা ফাঁকে পরিবার-পরিজনের খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন হাবিব। তিনি চার দিনের ছুটে পেয়েছেন, কিন্তু এখনও বেতন পাননি। ৩/৪ দিনের মধ্যে বেতন পেলে বাড়িতে আসবেন। বাড়িতে এসে চার দিনের ছুটি কাটিয়ে আবার চলে যাবেন।

মুঠোফোনে হাবিব মাকে আরও জানায়, মায়ের সাথে কথা বলার একপর্যায়ে হাবিব বলেছিলেন ছোট বোনকে ডাক্তারি পড়াবেন। যতই কষ্ট হোক তবুও ছোট বোনের পড়াশোনার সকল খরচ সে বহন করবেন তিনি। যেন ছোট বোনের ডাক্তারি পড়া বন্ধ না হয়। কিন্তু তার নিয়তি ঠিক করেছিল যে মায়ের কোলে ও বাড়িতে ঠিকই আসবে হাবিব, ‘তবে জীবিত নয়, নিথর ও দগ্ধ লাশ হয়ে।’

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর অগ্নিকান্ডে নিহত কম্পিউটার অপারেটর হাবিবুর রহমানের (২৫) মা হোসনে আরা বেগম আজ বিকেলে সাংবাদিকদের সামনে অশ্রুশিক্ত চোখে এমনটাই জানিয়েছেন। হাবিবুরের মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত স্বজনরা নিহত হাবিবুর রহমান ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ বালিয়া বটতলা গ্রামে। তিনি ফরাজি বাড়ির মো. সিদ্দিক বেপারীর মেয়ের ঘরের নাতি। হাবিবুরের বাবা শাহাবুদ্দিন পটুয়াখালীর বাসিন্দা ছিলেন।

ছোট বেলায় বাবা শাহাবুদ্দিনের মৃত্যু পর মায়ের সাথে থাকতেন ভোলার দক্ষিণ বালিয়া গ্রামের নানার বাড়িতে। মামা আলমগীরের সাথে দীর্ঘ ৭ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমান চট্টগ্রামে। এরপর চাকরি হয় সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে। প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিন শনিবার রাতেও ডিপোতে নাইট ডিউটি পালন করছিলেন হাবিবুর রহমান। ওই রাতেই ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্য সকলের সাথে প্রাণ যায় হাবিবুরের। তিনি ছিলেন তাদের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। এ মৃত্যুতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের পরিবারের আয়ের পথ।

অশ্রুশিক্ত চোখে হাবিবুরের নানা সিদ্দিক বেপারী জানান, হাবিব ছোট থাকতেই তার বাবা মারা যায়। আমরা ছোটবেলা থেকে তাকে লালন-পালন করে বড় করেছি। এ ৭ বছর হলো সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে কাজ করছিল সে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় হাবিবুরের সাথে কথা হইছে। তখন সে বললো নানা আমার রাত ৮ থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত ডিউটি এ সময় ফোন দিয়েন না। এটা আমার সাথে (নানার সাথে) তার শেষ কথা ।

নানা সিদ্দিক বেপারী আরও জানান, রবিবার সকালে সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার খবর পেয়ে আমার ছেলেকে ফোন দিলে সে জানায় যে রাতে ডিপোতে কেমিক্যাল বিস্ফোরণ হয়েছে। এতে অনেক মানুষ মারা গেছে। তখন হাবিবুরের কথা জিজ্ঞেস করলে জানায়, হাবিবুরও মারা গেছে আমরা তার লাশ নিয়ে ভোলায় আসতেছি।

হাবিবুরের মামা আলমগীরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, দুপুর ৩টায় চট্টগ্রাম মেডিকেলের (চমেক) মর্গ থেকে হাবিবুরের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁরা লাশ নিয়ে ভোলার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।