নতুন জোট গঠন নিয়ে যা বললেন ভিপি নুর

নতুন জোট গঠনের প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর। তিনি জানিয়েছেন, তারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবেন না। যারা এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত এবং যারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চান তারাই তাদের জোটে যোগ দিতে পারবেন।

রোববার (৮ মে) রাজধানীর পুরানা পল্টনে গণঅধিকার পরিষদের দলীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

নুরুল হক নুর বলেন, ‘একটা আলোচনা স্পষ্ট না করায় এটা বিভ্রান্ত তৈরি হয়েছে। আপনারা দেখেছেন গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি এধরনের বেশ কয়েকটি দল মিলে একটা জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। প্রাথমিক আমাদের কিছু কাজ হয়েছে এবং সেখানে সবাই একমত যে, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেব না। এখন কথা হচ্ছে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়া এবং একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য যারা একমত তাদের নিয়ে আমরা বৃহত্তর মঞ্চ গঠনের জন্য কাজ করবো। সেখানে শুধু এই কয়েকটি দল না, সবার জন্যই দরজা খোলা থাকবে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে, গণতান্ত্রিক রীতি-নীতিতে বিশ্বাস করে এবং আগামীতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে চায়, তাদের সাথেই আমাদের ঐক্য হবে।’

নুর বলেন, ‘বর্তমানে দেশে একটা চরম পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বলতে গেলে একটা রুদ্ধদ্বার পরিস্থিতি বিরাজমান। যেখানে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা নেই, লেখার স্বাধীনতা নেই, চলার স্বাধীনতা নেই, এরকম একটা রুদ্ধদ্বার পরিস্থিতিতে আমরা বাস করছি। ঈদের মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পরিবারের সাথে ঈদ করতে গিয়েও হামলার শিকার হতে হচ্ছে। আমাদের মতো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা হামলার শিকার হয়েছেন। আপনারা দেশেছেন গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কুমিল্লার দাউদকান্দির বাসায় হামলা করেছে ছাত্রলীগ যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। আমাদের এক নেতাকে তুলে নিয়ে তাকে মারধর করা হয়েছে। তাকে দিয়ে জোর করে ফেসবুকে পোস্ট করানো হয়েছে- আমি ভুল করে গণঅধিকার পরিষদ করেছি, আর করব না। এই ধরনের একটা নৈরাজ্য দেশে চলছে।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় হামলা হচ্ছে, মানুষকে গুম করছে, খুন করছে, কিন্তু প্রশাসন সেখানে নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। তাদের এই ধরনের ভূমিকায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে এবং সরকারের দুর্বৃত্তায়নের যে রাজনীতি এটা দেশকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা সরকারকে সতর্ক করে বলতে চাই, আপনারা দেশে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছেন, এই পরিস্থিতি যদি উত্তরণ না হয় সংঘাত বাড়বে, খুনোখুনি মারামারি বাঁধবে এবং কেউ রেহাই পাবে না।’

গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে আপনারা দেখেছেন, বিরোধী দল লাগেনি, আওয়ামী লীগ নিজে নিজেরাই মারামারি করে নুনের বাটি পর্যন্ত ভেঙে ফেলেছে। তাদের মধ্যে এই অবস্থা। আপনাদেরকে বলতে চাই, গ্রামে যদি বালা মসিবত আসে পীরের গায়েও লাগে। আজকে দেশের যে সংকট তৈরি করে রেখেছেন আপনারা নিজেরাও সেখান থেকে রেহাই পাবেন না। আমরা মনে করি, বর্তমান এই সংকট থেকে উত্তরণের একটাই পথ, একটা নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন। গণতান্ত্রিক ব্যস্থায় ফিরে যাওয়া। বর্তমান সরকার যে বিনাভোটের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা চালু করেছে এই ব্যবস্থাকে সমাপ্ত করে একটা গণতান্ত্রিক যাত্রায় আমাদেরকে শামিল হতে হবে।’

আলোচনা সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, নাগরিক ঐকের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রবাসী ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।