টিপকাণ্ডে গোটা দেশে হইচই। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা। বেশি হইচই সোশ্যাল মিডিয়ায়। কপালে টিপ পরার কারণে পুলিশের এক সদস্য কর্তৃক এক শিক্ষিকাকে হেনস্তা এবং কটাক্ষ করার অভিযোগে অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাতে শামিল হয়েছেন অভিনেতারাও। তারা কপালে টিপ পরে, সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন। একটু দেরিতে হলেও ওই ঘটনায় এবার বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন আজমেরী হক বাঁধন।
এই অভিনেত্রী বললেন, ‘টিপ বিতর্কের পর আমি টিপ পরা একটি ছবি পোস্ট করতেই কুমন্তব্য ধেয়ে আসে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই যে ঘটনাটি ঘটেছে তা যে আগে ঘটেনি এরকমটা নয়। এরকম অহরহ ঘটছে। যিনি এই ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনি সাহস করে পুলিশের কাছে গেছেন। কিন্তু এই ঘটনা আমাদের সঙ্গে অহরহ ঘটছে। যেটা আমরা অস্বীকার করলেও এই বীজ বহুদিন আগেই বপন করা হয়েছে এবং তা রয়ে গেছে।’
বাঁধনের মতে, ‘এই বীজটা হয়তো আমার ভেতরে ছিল। কিন্তু সেটা কখনও আমাকে এমনভাবে তাড়িত করতে পারেনি যে, আমি টিপ পরতে পারব না, সিঁদুর পরতে পারব না। আমি শখ করে শাঁখা পলাও পরি। আমার খুব ভালো লাগে। আমার প্রচুর বন্ধু আছে, যারা অন্য ধর্মের। আমি কিন্তু পূজায় যাই। আমার প্রসাদের নাড়ু, নিরামিষ খাবার, লুচি খেতে ভীষণ ভালো লাগে। আমাদের বাসায় ওই স্বাদ পাওয়া যায় না। আমার ভেতরে বীজটা না বাড়লেও এটা সমাজে রয়ে গেছে।’
নায়িকার আক্ষেপ, ‘এটা নিয়ে কথা হয় না, এই বিষয়টা আমাকে তাড়িত করে। আমার মনে হয়, আমরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করি, ব্যবসা করি, ধর্মকে বিক্রিও করি। যেটা ভীষণ ভয়ংকর। মানুষের অধিকার নিয়েও এটা হয়। এই অবক্ষয় ক্রমাগত দেখছি। তবে এটা শুধু আজকের ঘটনা নয়। আমার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে বারবার শুনতে হয়, ‘হিন্দু হয়ে গেছিস নাকি’ ‘স্লিভলেস কেন পরছিস’ ‘তোর মেয়ের কী হবে’- আরও কুৎসিত কুৎসিত কথা শুনতে হয় যা আমি উচ্চারণও করতে পারব না।’
বাধন বলেন, ‘এরকম নানা মন্তব্য আমাকে প্রতিনিয়ত ফেস করতে হয়। এটা অবশ্যই আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। এই অবক্ষয়ের জন্য শুধু একজন ব্যক্তি দায়ী নয়। এই অবক্ষয়ের জন্য দায়ী সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্র ব্যবস্থা আর আমাদের প্রতিবাদ না করার স্বভাব। আমরা কখনোই এই বিষয়ে সোচ্চার হইনি। সেই কারণেই আমাদের সমাজ ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি।’
কপালে টিপ পরায় গত শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটে তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দারকে হয়রানি করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে এক পুলিশ সদস্যর বিরুদ্ধে। পরে সিসিটিভির ফুটেজের মাধ্যমে ওই পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করা হয় এবং তাকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।