৮৮ বছর পর তুরস্কের বিখ্যাত আয়া সোফিয়া গ্র্যান্ড মসজিদে রমজানের মাসের প্রথম তারাবি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (১ এপ্রিল) রাতে ইস্তাম্বুল শহরের ঐতিহাসিক এ স্থাপনায় তা অনুষ্ঠিত হয়। তারাবির নামাজে অংশ নিতে আয়া সোফিয়া চত্বরে সমবেত হন মুসল্লিরা। স্মরণীয় এ তারাবি নামাজে উপস্থিত ছিলেন দেশটির ধর্ম বিভাগীয় অধিদপ্তরের প্রধান অধ্যাপক ড. আলি ইরবাশসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যক্তিবর্গ।
তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহ সূত্রে জানা যায়, আসন্ন পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে এ আয়া সোফিয়ায় কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, সঙ্গীত, আলোচনাসহ নানা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পবিত্র মাসজুড়ে দুপুরের নামাজের আগে মুফতি, মুসলিম আইন বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করবেন।
২০২০ সালের ২৪ জুলাই ঐতিহাসিক এ স্থাপনা নামাজের জন্য খুলে দেওয়া হয়। করোনা মহামারি সংক্রমণরোধে গত দুই বছর মসজিদের নামাজে বিধি-নিষেধ ছিল। ব্যাপকভাবে করোনা টিকাপ্রদান, মৃত্যুসংখ্যা হ্রাস ও সুস্থতার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় তুরস্কের সরকার পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে সব মসজিদ খুলে দিয়েছে।
দীর্ঘ ৮ দশক পর অনুষ্ঠিত তারাবির নামাজে আগত মুসল্লিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ড. আলি ইরবাশ বলেন, ‘আমাদের মহান রবকে যথার্থ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে পারব না। দীর্ঘ ৮৮ বছর পর আয়া সোফিয়ায় তারাবির নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা সব মসজিদে গত দুই বছর যাবত তারাবির নামাজের আয়োজন করতে পারিনি। আমরা দীর্ঘ সময় স্বাভাবিক পরিস্থিতির অপেক্ষায় ছিলাম। মহার সৃষ্টিকর্তার জন্য সব প্রশংসা। তিনি আমাদের আকুতি শুনেছেন। আমাদের তিনি পবিত্র রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। আশাকরি আমরা তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারব। ’
তরুণদের মসজিদে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পেছন থেকে আসা শিশুদের আওয়াজ আমাদের বিরক্তিভাব দূর কদে দেয়। এসময়ে ধর্মবিভাগের দায়িত্বশীলরা যারা কোরআন পাঠ জানে না তাদের তা শেখাতে পারেন। ’
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে বিভিন্ন প্রোগ্রামের আয়োজন করেছে ইস্তাম্বুলের ইফতা বিভাগ। রমজানের পুরো মাস এ প্রদেশের ১৫৮টি মসজিদ সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তারাবির নামাজ ছাড়াও অনেক মসজিদে কোরআনের তাফসির অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। রমজান মাসের শেষ ১০দিন আগ্রহী মুসল্লিরা ইতিকাফ করতে পারবেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক মসজিদে সর্বোচ্চ পাঁচজন ইতিকাফ করতে পারবেন।
৫৩২ সালে ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া নির্মিত হয়। ১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুল বিজয়ের আগ পর্যন্ত ৯১৬ বছর তা খ্রিস্টানদের গির্জা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এরপর ১৪৫৩-১৯৩৪ সাল পর্যন্ত তা মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এরপর ৮৬ বছর ঐতিহাসিক এ স্থাপনা জাদুঘর হিসেবে থাকে। ১৯৮৫ সালে আয়া সোফিয়াকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
২০২০ সালে ১০ জুলাই তুরস্কের একটি আদালত ১৯৩৪ সালে জাদুঘর রূপান্তর বিষয়ক মন্ত্রিসভার আদেশ বাতিল করে আয়া সোফিয়াকে পুনরায় মসজিদ হিসেবে ব্যবহার নির্দেশনা দেয়। অবশ্য তা দেশি-বিদেশি সব দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত।