ঢাকার খাবার দাবার নিয়ে ভিডিও বানাতে ফুডকা টিম গত ২৪ মার্চ বাংলাদেশে এসেছিলো, সঙ্গে ছিলো কলকাতার নামকরা উপস্থাপক-অভিনেতা ও কণ্ঠশিল্পী মীর আফসার আলী এবং ব্লগার ইন্দ্রজীৎ লাহেড়ীসহ টিমের অনেকে। ফুডকা টিম প্রায় ১ সপ্তাহ ঢাকার অলিগলি চষে বেড়িয়েছেন, বানিয়েছেন ভিডিও। এরইমধ্যে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারেও ঠু মারতে ভুলেননি তারা।
এপ্রিল ঢাকা ছাড়ার আগে বাংলাদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যক্ত করে ‘ফুডকা’ টিমের অন্যতম সদস্য ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইন্দ্রজীৎ লাহেড়ী। আমাদের সময়. কমের পাঠকদের জন্য লেখাটি হুবুহু তুলে ধরা হলো:
আমরা এসেছিলাম বাংলাদেশের খাবারের গল্প বলতে। কিন্তু যাবার সময় বুঝলাম, কখন যেন গল্পটা দুই বাংলার মানুষের গল্প হয়ে গেছে। বিরক্ত হয়ে গেছি এক এক সময় ভালোবাসার চোটে- রাত নেই, দিন নেই ….. আপনারা এখানে এলেন, ওখানে গেলেন না? হয়তো বা চেনাশোনা নেই- কিন্তু দাদা, বাসায় দাওয়াত রইলো। হোটেলে দুটি কাচ্চি পাঠাবো? যে সুন্দরী মেয়েটি আমাদের সঙ্গে সারা ট্রিপ ছিল, কারণে অকারণে হেসে গড়িয়ে পড়তো, কাল সন্ধেবেলা দেখি তার চোখটাও কেমন ছলছলে। প্রথম সারির দৈনিকের যে হর্তাকর্তা আমাদের সঙ্গে শুধু আড্ডা মারার জন্য আসতো রোজ, কাল থেকে আর পাত্তা নেই- যাওয়ার সময় হয়ে আসছে যে। যে বাচ্চা মেয়েটি তার মেটাল মামাকে ফোনে বোঝাচ্ছিলো যাতে আর একটু বেশি সময় থাকে ফুচকার পসরা নিয়ে
– আমাদের হেভি মেটাল ফুচকা খাওয়াবে বলে, যাওয়ার আগের দিন হাতে একটু ডিব্বা গুঁজে দিয়ে সেও হাওয়া। কার কার কথা বলবো? প্রথম সারির কনটেন্ট ক্রিয়েটররা নিজেদের সময় নষ্ট করে আমাদের সঙ্গে ঘুরেছেন, চিনিয়েছেন, শিখিয়েছেন….. জানি,অনেকের সঙ্গে ঠিক করে কথা বলতে পারি নি। ইয়ার্কি মেরেছি, রাগ করেছি, হয়তো সবাইকে সময়ও দিতে পারিনি – কিন্তু বিশ্বাস করুন, চেষ্টা করেছিলাম, আসলে আমরাও মানুষ তো, মাঝে মাঝে আমরাও ছড়িয়ে ফেলি। আপনারা রাগ করবেন না, জানি। কিন্তু কিছু জিনিস হয়তো ছেড়ে যাওয়া ভালো। তাতে ফেরার টান থেকে যায়।
আমাদের দুটি দেশ প্রায় একই রকম- কথা , লিপি, আদর- প্রায় সবটাই। আতিথিয়েতা এখানে অত্যাচারের পর্যায়ে চলে যায় একটাই কারণে- হয়তো মনে হয় যে, নিজেরই তো লোক, কিছুদিনের জন্য এসেছে- পরিযায়ী পাখি, আবার চলে যাবে। দুটি ভাত খাওয়াবোনা ? আমরা দুটি দেশ একে অন্যকে নিয়ে প্রচুর খিল্লি করি। কিন্তু আপনি কি কখনো অচেনা কারোকে নিয়ে ঠাট্টা মারেন? মনে তো হয় না।
এ দেশে এসে সবকিছু বাংলা ভাষায় লেখা দেখে চোখ যখন আরাম পায় , মনে হয়, এটাও তো আমারই জায়গা, দুদণ্ড দাঁড়িয়ে যাই….. অনেক তো হলো- ধুস। এক এক সময় ক্লান্ত লাগে। তখন ফিরে আসতে হয়. কিন্তু ফেরা সবার কপালে থাকে না। আচ্ছা, আত্মীয় কি শুধুমাত্র রক্তের সম্পর্কেই হয়? ফেলে আসা কোন এক অজ্ঞাত অমোঘ টান কি আমাদের কখনো বলে না, একবার ফিরে তাকাতে ? এখন যাওয়ার সময় এতো কিছু লিখতে গিয়ে কেমন একটা চোয়ালে ব্যাথা হচ্ছে, গলার কাছে কিছু একটা দলা পাকিয়ে আসছে…