ডায়াবেটিসের নতুন কারণ আবিষ্কার বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের

বহুমূত্র, মধুমেহ বা ডায়াবেটিস হওয়ার নতুন এক কারণ আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা। বুধবার দুপুরে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই আবিস্কারের তথ্য তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ আইএপি (ইন্টেস্টিনাইল অ্যালকেলাইন ফসফেটাস) কমে যাওয়া। এ আবিষ্কার ডায়াবেটিস চিকিৎসা ও গবেষণায় বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। মানুষ যখন খাবার গ্রহণ করে, তখন শরীরের প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিনের কাজ হলো যে খাবার খাওয়া হচ্ছে সেটির অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমিয়ে দেওয়া। যখন ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় বা ইনসুলিন উৎপাদন হওয়ার পরও যখন কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকে। সেই অবস্থাকেই বলা হয় ডায়াবেটিস।

গবেষক দলের প্রধান মধু এস মালো বলেন, গত পাঁচ বছরে ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৫৭৪ জন মানুষের ওপর গবেষণা করে ডায়াবেটিসের নতুন কারণ সম্পর্কে জানা গেছে। বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সুস্থ ব্যক্তির ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গবেষণার ফলাফল ইতিমধ্যে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে ছাপা হয়েছে।

কয়েক দশক ধরে অন্য গবেষকরা প্রতিষ্ঠা করেছেন যে, ডায়াবেটিসের প্রত্যক্ষ কারণ হলো টক্সিন-নিয়ন্ত্রিত নিম্ন গ্রেডের সিস্টেমিক প্রদাহ। এর ফলে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন ইনসুলিনের উৎপাদন ও কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস হয়।

মানবদেহের অন্ত্রে থাকা মৃত ব্যাকটেরিয়ার কোষপ্রাচীরের অংশ টক্সিন হিসেবে কাজ করে। এই টক্সিন সাধারণত মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়, তবে উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, ফ্রুকটোজ বা অ্যালকোহল টক্সিনকে রক্তে ঢুকতে সহায়তা করে। এর ফলে নিম্ন গ্রেডের সিস্টেটিম প্রদাহের সৃষ্টি হয়ে ডায়াবেটিস হতে পারে।

গবেষকরা জানান, মানবদেহের অন্ত্রে থাকা ইন্টেস্টিনাইল অ্যালকালাইন ফসফাটেস নামক এনজাইম ওই টক্সিনকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে এনজাইমের ঘাটতি হলে অন্ত্রে অতিরিক্ত টক্সিন জমা হয় এবং এই টক্সিন রক্তে ঢুকে সিস্টেমিক প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর ফলে একদিকে যেমন ডায়াবেটিস হতে পারে, তেমনি ইশকেমিক হার্ট ডিজিজও হতে পারে।

গবেষণায় দেখা যায়, যাদের শরীরে ইন্টেস্টিনাইল অ্যালকালাইন ফসফাটেস নামের এনজাইম বেশি থাকে, তাদের তুলনায় যাদের কম থাকে, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ১৩ দশমিক ৮ গুণ বেশি। অল্প বয়সীদের মধ্যে যাদের অন্ত্রে এ এনজাইমটি দ্রুত কমতে থাকে, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৭ দশমিক ৩ গুণ বেশি।

যাদের অন্ত্রে এনজাইমটি কম ছিল এবং পরে তা বেড়ে গেছে, তাদের ডায়াবেটিস হয়নি। এনজাইমটি যাদের অন্ত্রে কম ছিল, তাদের ফাস্টিং সুগার বৃদ্ধির মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ। এনজাইমের মাত্রা বেশি হলে স্থূলকায় ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হয়।

গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন, যাদের দেহে উল্লিখিত এনজাইমের পরিমাণ কম, তাদের এই এনজাইম খাওয়ানো হলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে গবেষকরা এ এনজাইমটি তৈরির চেষ্টা করছেন।

গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বারডেম, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক।