ইউক্রেনকে সাহায্যে এলেই পরমাণু অ’স্ত্র ব্যবহারের হুমকি

ইউক্রেনে সামরিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে কোন দেশ এগিয়ে আসলে পরমাণু অ’স্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাশিয়া। মিত্রদের সতর্ক করে দেশটির প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি সত্য যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর আমাদের সামরিক শক্তি কিছুটা কমেছে, কিন্তু এখনও রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পারমানবিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।’

বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ান টেলিভিশনের এক ভাষণে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার ভাষণের ঘণ্টাখনেকের মধ্যে দেশটিতে সামরিক অপারেশন পরিচালনা করে রুশ বাহিনী।

ভাষণে ইউক্রেন সরকারকে সামরিক সহায়তা দেওয়া হলে কী পরিণতি হতে পারে, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সতর্ক করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।

তিনি বলেন, আমরা পরমাণু অ’স্ত্র ছাড়াও, অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের মজুতেও যথেষ্ট সমৃদ্ধ। সুতরাং কোনো রাষ্ট্র যদি রাশিয়ায় সরাসরি আঘাত হানার সাহস দেখায়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে অশুভ পরিণতির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত।’

এখন পর্যন্ত বিশ্বে মাত্র একবারই পারমাণবিক অ’স্ত্রের ব্যাবহার হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তি টানতে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পারমাণবিক বোমা ‘লিটল বয়’ ও ‘ফ্যাট ম্যান’ নিক্ষেপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্রুম্যানের নির্দেশে যে লক্ষ্যে এই বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র, তা অবশ্য সফল হয়েছিল; ওই ঘটনার পরই মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ঘণ্টা বাজে এবং যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে শক্তির কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভাব ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের।

কিন্তু এই বোমা নিক্ষেপের কারণে যারা নিহত হয়েছিল তাদের প্রায় সবাই ছিল বেসামরিক মানুষ; এবং বিশ্বজুড়ে এখনও অনেকে এই ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে।

সেসব দিন অবশ্য বিশ্ব পেছনে ফেলে এসেছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্যে দিয়ে সমাপ্তিও ঘটেছে শীতল যুদ্ধের এবং নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেৎসিন রাশিয়ায় পূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলনের ঘোষণাও দেন।

তবে আমেরিকা এবং তার মিত্ররা রাশিয়ার পরমাণু অ’স্ত্রের মজুত সম্পর্কে বরাবরই দুশ্চিন্তায় ছিল।মূলত এই দুশ্চিন্তা থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু অ’স্ত্র নিয়ন্ত্রণের চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র ।

ন্যাটোকে কেন্দ্র করে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব শুরুর সময় থেকেই এ ব্যাপরে সচেতন ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাই সংকটের শুরু থেকেই বাইডেন বলে আসছিলেন, ন্যাটো ইউক্রেনে কোনো সৈন্যবহর পাঠাবে না; কারণ তিনি খুব ভালোভাবেই অবগত যে, ইউক্রেনে ন্যাটোর সেনারা পা রাখা মাত্র এই সংঘাত যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার লড়াইয়ে পরিণত হবে এবং সেটি একসময় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেবে।

তাই এ পর্যন্ত রুশ প্রেসিডেন্টের প্রায় প্রতিটি মন্তব্যর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দিলেও বৃহস্পতিবার যখন পুতিন পারমাণবিক অ’স্ত্রের ভয় দেখালেন, তখন সঙ্গত কারণেই পাল্টা মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছে যুক্তরাষ্ট্র।