তুরস্কের নাগরিককে ঢাকা থেকে গ্রেফতার, চাঞ্চল্যকর তথ্য

হাকান জানবুরকান। ৫৫ বছর বয়সী এই ব্যক্তি তুরস্কের নাগরিক। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, কানাডা, সৌদি আরব ও স্পেনে গিয়ে দেশগুলোর নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ক্লোন করে টাকা তুলে নেন বুথ থেকে।

এভাবে প্রায় ৪০টি দেশের বুথ থেকে টাকা তুলে নেওয়ার পর আসেন বাংলাদেশে একই কাজের টার্গেট নিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশে এসে আর সেই সুবিধা করতে পারেননি তিনি। ধরা পড়তে হয়েছে তাকে। যদিও এর আগে কয়েকবার তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন একই কাজের উদ্দেশে।

গতকাল (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলশান-১ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক এটিএম কার্ড ক্লোনিং স্ক্যামিং চক্রের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হাকান জানবুরকানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একইসঙ্গে তার সহযোগী মো. মফিউল ইসলাম নামের এক বাংলাদেশিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ৫টি মোবাইল, ১টি ল্যাপটপ, ১৫টি ক্লোন কার্ডসহ মোট ১৭টি কার্ড জব্দ করা হয়েছে।

দুজনই ভারতীয় পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়ে আসা আন্তর্জাতিক এটিএম কার্ড ক্লোনিং স্ক্যামিং চক্রের সদস্য।হাকান হলেন মূলহোতা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) তাদের গ্রেফতার করেছে। মফিউল ইসলামের ভাই একই অপরাধে গ্রেফতার হয়ে ভারতে জেলে রয়েছেন।

বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, গ্রেফতারকৃত হাকান জানবুরকান তুরস্কের নাগরিক। তিনি আন্তর্জাতিক এটিএম কার্ড ক্লোনিং স্ক্যামিং চক্রের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড। গত ২ জানুয়ারি হতে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন বুথে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া,

নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, তুরস্ক, সৌদি আরব, অস্ট্রিয়া, জার্মানি, ভিয়েতনাম, যুক্তরাজ্য, কানাডা, বলিভিয়া, স্পেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়েসহ প্রায় ৪০টি দেশের নাগরিকের ক্রেডিট কার্ড ক্লোন করে স্ক্যামিংয়ের মাধ্যমে শতাধিকবার টাকা উত্তোলনের জন্য চেষ্টা করেন।

কিন্তু ব্যর্থ হন। কারণ ইস্টার্ন ব্যাংক অ্যান্টি ফেমিং টেকনোলজি ব্যবহার করায় অ্যালার্ম সিস্টেমের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারে। এই নাগরিক একাধিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশে এসেছেন বলে জানান সিটিটিসির প্রধান।

তিনি আরও জানান, হাকান ২০১৯ সালে ভারতের আসাম রাজ্যের পল্টনবাজার পুলিশ স্টেশনের এটিএম স্ক্যামিং মামলায় অন্য এক তুরস্কের নাগরিক এবং ২ বাংলাদেশিসহ গ্রেফতার হন। ওই ঘটনায় হাকানসহ তারা ভারতের বিভিন্ন এটিএম বুথ থেকে কার্ড ক্লোনিং করে প্রায় ১০ লাখ রুপি আত্মসাৎ করে।

ওই সময় ভারতে প্রায় ২০ মাস জেলে থাকার সময় আগরতলা পুলিশের হেফাজত হতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় কৌশলে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এক ভারতীয় ব্যক্তির সহায়তায় দুই লাখ রুপির বিনিময়ে সিকিম হয়ে নেপালে পৌঁছান।

সেখান থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে নিজ দেশে ফিরে যান। এর আগেও তিনি বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছেন। সর্বশেষ হাকান গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর আবারও বাংলাদেশে আসেন।

এই চক্রে তুরস্ক, বুলগেরিয়া, মেক্সিকো, ভারত, বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক জড়িত আছে বলেও পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত একটি মামলায় রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে।

কোন ভিসায় হাকান জানবুরকান বাংলাদেশে এসেছিলেন- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে আসাদুজ্জামান জানান, তিনি ব্যবসায়িক ভিসায় বাংলাদেশে আসেন।