থাইরয়েডের সমস্যা বর্তমানে অতি পরিচিত একটি রোগ। পৃথিবীতে অন্তত ১২ শতাংশ মানুষ থাইরয়েডজনিত সমস্যায় ভোগেন। থাইরয়েডের সমস্যা সবথেকে বেশি দেখা দেয় মহিলাদের মধ্যে। পুরুষের তুলনায় মেয়েরা বেশি এই রোগে আক্রান্ত হন বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা।
থাইরয়েডের সমস্যার ফলে আরও অনেক অসুখ দেখা দিতে পারে। তাই একেবারে শুরু থেকে লক্ষণ দেখে বুঝে নেওয়া দরকার যে থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাহলে যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যাবে, তত অনেক সমস্যা প্রতিরোধ করা যাবে।
মানুষের গলার সামনের দিকে প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থিটির নাম থাইরয়েড। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি হরমোন তৈরি হয়। আর যখন থাইরয়েডে হরমোনগুলো অস্বাভাবিক উৎপাদন হয় তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আমাদের গলা বা ঘাড়ের কাছেই থাকে থাইরয়েড গ্রন্থি। এই গ্রন্থিই থাইরয়েড হরমোন তৈরি করে। তাদের মতে, থাইরয়েডের সমস্যা হয় খুব বেশি দেখা দেয়, নাহলে খুব কম দেখা দেয়। এটা পুরোটাই নির্ভর করে কতটা হরমোন তৈরি হচ্ছে তার উপর। মা হওয়ার পর কিংবা মেনোপজের পর মহিলাদের মধ্যে বহু ক্ষেত্রে থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয়।
শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন না গেলে থাইরয়েডের সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। লবণ শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর হলেও এটি থাইরয়েড সমস্যার মোকাবিলা করতে সক্ষম যেহেতু এরমধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন রয়েছে।
আপনার শরীরে থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিয়েছে কী না, জানার জন্য এই আটটি লক্ষণের দিকে নজর রাখুন। এই শারীরিক বা মানসিক লক্ষণগুলো দেখা দিলে আপনার তাড়াতাড়ি সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিত।
অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়াও থাইরয়েডের লক্ষণ হতে পারে। শরীরের বিপাকের মাত্রা যদি কমে যায় বা বেড়ে যায়, তার সঙ্গে আপনার শরীর কতটা ক্যালরি বা ফ্যাটের মাত্রার হেরফের হওয়া খুবই স্বাভাবিক, যার ছাপ আপনার ওজনে পড়তে বাধ্য।
থাইরয়েডের সব থেকে সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে ক্লান্তি। থাইরয়েড হরমোন মূলত শরীরে শক্তি জোগান দেয়। আপনি যদি অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে তা থাইরয়েড হওয়ার লক্ষণ হতেই পারে।
বেশি শীত না পড়লেও যদি আপনার খুব সহজেই ঠান্ডা লাগে, তার মানে আপনার শরীর যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালরি ঝরাচ্ছে না। বরং আপনার শরীর ক্যালরি সঞ্চয় করে রাখছে। যা থাইরয়েড হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা যেতে পারে।
বিপাকের সমস্যার কারণে আপনার পেশির এবং জয়েন্টের শক্তির ক্ষয় হতে পারে। যার ফলে আপনার পেশি বা জয়েন্ট দুর্বল হয়ে যেতেই পারে।
থাইরয়েডের সমস্যা হলে আপনার চুল ঝরা বেড়ে যেতে পারে। চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যাওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই থাইরয়েডজনিত সমস্যা দায়ী।
বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী বেশির ভাগ মানুষ যারা থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন, তারা অবসাদের কবলে পড়ে যেতে পারেন।
থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন এমন অনেকেই মানসিক ক্লান্তির কথা বলেন। মনোযোগ দিতে না পারা, বা সহজেই কোন কথা ভুলে যাওয়া, এগুলো থাইরয়েডের ক্ষেত্রে অত্যন্ত পরিচিত লক্ষণ।
শরীরের অন্যান্য হরমোনের সঙ্গে থাইরয়েড হরমোনের সম্পর্ক থাকায়, সেই হরমোনের বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া অন্যান্য হরমোনের কার্যকারিতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। ঋতুস্রাব জড়িত হরমোনের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। যার ফলে ঋতুস্রাবের সময় এবং তীব্রতায় সমস্যা হতে পারে।
আয়োডিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাবার থাইরয়েডের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তাই যে খাবারে এই উপাদানগুলো বেশি থাকে যেমন, দুধ, পনির, দই এই ধরনের দুগ্ধজাতীয় খাবার থাইরয়েডের জন্য অনেক বেশি উপকারী। আয়োডিন সাপ্লিমেন্টও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আপনার থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে কোনও ভাবেই চিনি খাবেন না। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে টি-৩ ও টি-৪ এই দুটি হরমোন উত্পন্ন হয়ে। যা স্বাস্থ্য়ের পক্ষে খারাপ।
থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে ভিটামিন বি খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে ভিটামিন বি১২ হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই যেগুলো খাবারে এই ভিটামিন বেশি থাকে যেমন, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, বাদাম এগুলো প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তভুক্ত করতে হবে যাতে এগুলি শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি সরবরাহ করতে পারে।
ভিটামিন ডি এর অভাবেও অনেক সময় থাইরয়েডের সমস্যা হয়ে থাকে। আর একমাত্র সূর্যের আলোতেই শরীর ভিটামিন ডি প্রস্তুত করতে পারে। তাই দিনে অন্তত পক্ষে ১৫ মিনিট সূর্যের আলোয় থাকতে হবে। ভিটামিন ডি বেশি পরিমাণে থাকে এমন কিছু খাবার হচ্ছে- স্যালমন, ম্যাকারেল, দুগ্ধজাতীয় দ্রব্য, কমলালেবুর রস, ডিমের কুসুম ইত্যাদি।