বাজির শব্দে তছনছ হয়ে যায় রেমিনের জীবন

মেধাবী শিক্ষার্থী শারমিন জামান রেমিন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে এসএসসি পাস করেছিল। কিন্তু আনন্দ-খুশি উদযাপনে ফোটানো বাজির শব্দে তার পুরো জীবনটাই তছনছ হয়ে গেছে। একটি বাজির শব্দ শুধু রেমিনের জীবনই নয়, পুরো একটি পরিবারের সারা জীবনের কান্না হয়ে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ করে ফুটে ওঠা বাজির শব্দে ব্রেইন স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে গেছে রেমিন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুর শহরের পূর্ব খাবাসপুরের বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী জাহিদ রিপনের একমাত্র মেয়ে রেমিন। ২০১৭ সালের জুন মাসের ঘটনা। পবিত্র রমজানের ঈদের খুশিতে বাসার পাশে হঠাৎ করে ফোটানো বাজির শব্দে ভয়ে কেঁপে উঠে রেমিন। সেই থেকে অসুস্থ। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে একপর্যায়ে প্যারালাইজড হয়ে যান। দীর্ঘদিন চিকিৎসায় সামান্য উন্নতি হলেও রেমিনের ডান হাত-পা প্যারালাইজড হয়ে পড়ে। এখনো হাঁটাচলা করতে পারেন না।

মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) রেমিনের চাচা সাংবাদিক সুমন ইসলাম বলেন, ‘আমরা পাঁচ ভাই সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে জড়িত। আমাদের পরিবার ও আমার ভাতিজির স্বপ্ন ছিল সাংবাদিকতা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করার। কর্মজীবনে বাবা ও চাচাদের মতো সাংবাদিকতা পেশায় নিজেকে জড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু তার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে একটি বাজির শব্দে।’

আরেক চাচা সাংবাদিক কামরুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘এই ঘটনা না ঘটলে, রেমিন সুস্থ থাকলে এখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকতো। তার ও আমাদের পরিবারের সবার আশা-স্বপ্ন পূরণ হতো। অথচ এখন তার সময় কাটে বিছানায় শুয়ে-বসে। তবে ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ-উল্লাসের অমানবিক প্রক্রিয়া এখনো চলছে।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এখনো নিউ ইয়ার, ঈদ-পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবে কারণে-অকারণে বাজি ফোটানো হচ্ছে। আতশবাজি, ফানুস আর শব্দ দূষণ করে মাঝরাতে উচ্চ ভলিউমে গান বাজানো- এসব ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ছে না। কিন্তু এ নিয়ে কোনো আইন-কানুন বা নিয়ম-নীতি কিছুই নেই।’

রেমিনের পিতা জাহিদ রিপন বলেন, ‘আমার মেয়েটা প্রচণ্ড মেধাবী ছাত্রী ছিল। কে বা কাদের আনন্দে হঠাৎ ফুটে ওঠা বাজির শব্দে তার জীবনসহ আমাদের পুরো পরিবারটাই তছনছ হয়ে গেছে। আমার মেয়েটা এখন পর্যন্ত পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজনদের চিনতে পারে না। কোনো মতে ধরে ধরে তাকে হাঁটাহাঁটি করাতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখনো উচ্চ শব্দের কোনো ধরনের আওয়াজ সে সহ্য করতে পারে না। এছাড়াও আমার আরেকটি ছেলে আছে সে নবম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শব্দ দূষণের কারণে শহর ছেড়ে গ্রামে বসবাস করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’