কিডনিতে সমস্যা হয়েছে বুঝবেন যেসব লক্ষণে

কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে কিডনি রোগ মৃত্যুর কারণ হয়। শরীরের ছাকনির মতো কাজ করে কিডনি। শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে অতি দরকারি এই অঙ্গটি। তাতে গোলামাল হলেই হুমকির মুখে পড়বে জীবন।

কিডনির সমস্যাকে বলা হয় ‘নীরব ঘাতক’। আপনার অজান্তেই ভেতরে ভেতরে শেষ করে দিতে পারে এই নীরব ঘাতক। তবে আগে থেকে বুঝতে পারলে কিডনি সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

কিডনির সমস্যা দেখা দিলে শরীরে আরও বেশ কিছু রোগের প্রকোপ বাড়ে। যার ফলে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ার পাশাপাশি প্রাণহানিও হতে পারে। কোন কোন লক্ষন দেখে কিডনির সমস্যা বোঝা যাবে, সেগুলো জেনে রাখা খুব জরুরি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনির সমস্যা দেখা দিলে শরীরে আরও বেশ কিছু রোগের প্রকোপ বাড়ে। যার ফলে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ার পাশাপাশি প্রাণহানিও হতে পারে। তাই কী কী কারণে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে, কোন কোন লক্ষণ দেখে কিডনির সমস্যা বোঝা যাবে, সেগুলো জেনে রাখা খুব জরুরি।

শরীরে অন্য কোন রোগ বাসা বেঁধে থাকলে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে, তা জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যাদের শরীরে ইতিমধ্যে মধুমেহ, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বা হাইপারটেনশন, বিভিন্ন হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে, পরিবারে আরও কোনও সদস্যের কিডনির সমস্যা দেখা গিয়েছে এছাড়া ষাট বছরের উর্ধ্বের ব্যক্তিদের মধ্যে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কিডনি ফেলিওর হলে কোন কোন লক্ষণ দেখা যায়?

১. চুলকানি ২. পেশিতে টান ধরা ৩. মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাব ৪. ধিকে না পাওয়া ৫. অতিরিক্ত প্রস্রাব পাওয়া কিংবা একেবারেই প্রস্রাব না হওয়া ৬. শ্বাস নিতে সমস্যা ৭. ঘুমের সমস্যা

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যদি কোনও ব্যক্তির কিডনি আচমকা কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তাহলে কোন কোন লক্ষণ দেখা দিতে পারে-

১. তলপেটে ব্যথা ২. পিঠে ব্যথা ৩. ডায়রিয়া ৪. জ্বর ৫. নাক থেকে রক্ত পড়া ৬. ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দেওয়া ৭. বমি

কিডনি বিকল হলে প্রস্রাব করতে সমস্যা হয়। প্রস্রাবের সময় চাপও বোধ হয়। যদি অনেকক্ষণ ছাড়া ছাড়া প্রস্রাব হয় এবং প্রসাবের রং গাঢ় হয় বা যদি অস্বাভাবিক পরিমাণে প্রসাব হতে থাকে বা খুব ঘন ঘন ফ্যাকাশে রঙের প্রস্রাব হয়, ধরে নেয়া যায় কিডনি ঠিকমতো কাজ করছে না। রাতে ঘুমের সময় বারবার প্রস্রাব করতে ওঠাও, কিডনির সমস্যার লক্ষণ। ত্বকে ফুসকুড়ি বা র‌্যাশ শরীরে যখন অতিমাত্রায় টক্সিন জমে, অথচ কিডনি কাজ করতে পারে না, ত্বকে তখন ফুসকুড়ি বেরোয়। অন্যান্য চর্মরোগও দেখা যায়। ক্লান্তি চেপে বসবে সুস্থ কিডনি থেকে ইপিও (এরিথ্রোপোয়েটিন) হরমোন নিঃসৃত হয়।

এই হরমোন অক্সিজেন বহন করতে আরবিসি বা লোহিত রক্তকণিকাকে সাহায্য করে। কিডনি ফেলিওরে এই হরমোন নিঃসরণ কমে যাওয়ায় আরবিসিতে তার প্রভাব পড়ে। অল্প পরিশ্রমই ক্লান্ত করে দেয়। মস্তিষ্ক ও পেশিকেও প্রভাবিত করে। রক্তাল্পতারও একই লক্ষণ। শ্বাসকষ্ট কিডনির সমস্যার একটা কমন লক্ষণ। আরবিসি কমে যাওয়ার কারণে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়। এর ফলে শরীরে, বিশেষত ফুসফুসে টক্সিন জমতে থাকে। মাথা ঘোরা ও মনোনিবেশ করতে সমস্যা শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দুটি কারণে হতে পারে। অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা নয়তো কিডনি ফেলিওর। মস্তিষ্কে অক্সিজেনের জোগান কমে যাওয়ার কারণেই একাগ্রতা কমে যায়। স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। মাঝেমধ্যে মাথাও ঘুরবে।

যখন কিডনি কাজ করা বন্ধ করতে শুরু করে, তখন শরীরের বর্জ্য পদার্থ রক্তে মিশতে শুরু করে। এই বর্জ্য পদার্থের বেশির ভাগই হচ্ছে অম্লীয় পদার্থ। তাই এই বর্জ্য যখন রক্তের সঙ্গে ফুসফুসে পৌঁছায় তখন ফুসফুস সেই বর্জ্য বের করার জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করা শুরু করে। এ কারণে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ফুসফুসে ঢুকতে পারে না। এতে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে।

কিডনি রোগ হলে গরম আবহাওয়ার মধ্যেও শীত শীত অনুভব হয়। আর কিডনিতে সংক্রমণ হলে জ্বরও আসতে পারে।

কিডনির সমস্যা আপনার চোখে ঝাপসা দেখা কিংবা মানসিক অস্থিরতার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ শরীরের বর্জ্য পদার্থের একটি বড় অংশ হচ্ছে ইউরিয়া। কিডনির সমস্যার কারণে ইউরিয়া শরীর থেকে বের না হয়ে বরং রক্তে মিশে যায়। এই দূষিত রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছে মানসিক অস্থিরতা, ঝাপসা দেখা এই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। যদি ইউরিয়ার পরিমাণ অত্যধিক হয় তাহলে তা মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে, যার ফলাফলে রোগী কোমাতে পর্যন্ত চলে যেতে পারেন।

এই সমস্ত লক্ষণ দেখা দিলে একেবারেই ফেলে রাখা ঠিক নয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের। যতটা সম্ভব দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে চিকিৎসা শুরু করা দরকার।