ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ সব প্রত্যঙ্গ খারাপ হতে থাকে সময়ের সঙ্গে। শুয়ে–বসে থাকা, বেশি ওজন, বেশি খাওয়া, মানসিক চাপ ইত্যাদি যেমন ক্ষতিকর, ঠিক তেমনই ক্ষতিকর সাধারণ কিছু অভ্যাস, যা না জেনে–বুঝে করোনাকালে আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে। যেমন, টিভি দেখা, নরম পানীয় খাওয়া বা মাঝেমধ্যে না খেয়ে থাকা। ডায়াবেটিসের প্রবণতা যদি থাকে, এই সব অভ্যাস চালিয়ে গেলে রোগ হতে পারে যখন–তখন। রোগের প্রকোপও বাড়তে পারে। চলুন দেখে নিই যেসব অভ্যাসে বেড়ে যাচ্ছে ডায়াবেটিস-
# অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়ে। নিয়মিত হলে রোগের সূচনা হতে পারে। কাজেই সময়ে খাওয়া–দাওয়া করুন।
# দুপুরে ১০–১৫ মিনিট একটু ঘুমিয়ে নিলে যেখানে ক্লান্তি কমে, বিকালে কাজের উৎসাহ বাড়ে, সেটাই দুই এক ঘণ্টা পার করে দিলে বিপদ হয়। বাড়ে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা।
# সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, মাত্র বছর খানেক টানা নাইট ডিউটি করলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ে প্রায় ১৭ শতাংশ, ৩–৯ বছর করলে ২৩ শতাংশ ও ১০ বছর পেরিয়ে গেলে ৪২ শতাংশের মতো। এর প্রধান কারণ মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ কমে যাওয়া। যার পরিণতিতে ইনসুলিন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না বলে সমস্যা হয়। এ বিপদ এড়াতে ঘুমানোর আধ ঘণ্টা আগে ডাক্তারের পরামর্শমতো মেলাটোনিন খান।
# নরম পানীয়তে থাকে কর্ন সিরাপ, যা নিয়মিত খেলে রক্তে ফ্রুকটোজের পরিমাণ বাড়ে। তার হাত ধরে ওজন বেড়ে সূচনা হতে পারে বিপদের। প্যাকেটের ফলের রসেও থাকে চিনি। নিয়মিত খেলে রক্তে সুগার বাড়তে পারে। কমতে পারে ইনসুলিনের কার্যকারিতা।
# ব্রাউন সুগার, মধু বা গুড়ের ক্যালোরি চিনির চেয়ে কম। কাজেই মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হলে চিনির বদলে মাঝেমধ্যে খেতে পারেন। চিনিও খেতে পারেন এক–আধ বার।
# আলুর যত বদনাম, তত সে খারাপ নয়। ১০০ গ্রাম আলুতে যেখানে আছে ১০০ ক্যালোরি, ১০০ গ্রাম চাল–আটায় ৩৪০ ক্যালোরি আছে। তার উপর আলুতে আছে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, যা সুগার কমাতে সাহায্য করে। তবে এর আবার গ্লাইসিমিক ইনডেক্স বেশি, অর্থাৎ খেলে চট করে সুগার বেড়ে যায়। কাজেই খেতে হয় অল্প করে, খোসাসমেত বা অন্য সবজির সঙ্গে মিশিয়ে। ভেজে নয়।
# রক্তচাপ বেশি থাকলে কফি কম খান। কারণ রক্তচাপ বেশি হলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা এমনিই বাড়ে, তার উপর কফি খাওয়ার ফলে গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়ায় গোলমাল হলে তা আরও বাড়বে।
# রক্তচাপ বাড়ানোর মূলে ধূমপানের বিরাট অবদান। তার হাত ধরে ডায়াবেটিস হওয়ার ও তার জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। কাজেই এই অভ্যাসটি ত্যাগ করুন।
# নিয়মিত এক ঘণ্টা টানা টিভি দেখলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ে প্রায় ৩.৪ শতাংশ। সারাদিন টিভি দেখলে ওজন ও ভুঁড়ি বাড়ার হাত ধরে আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।
করণীয়
# সকালে ভালো করে খেলে শরীর তৃপ্ত হয়, কমে খাই খাই ভাব।
# খাওয়ার পর ঘণ্টাখানেক হাঁটতে না পারলে রাত্রে কম করে খান। সন্ধ্যা ৭–৮ টার মধ্যে খেয়ে শোয়ার আগে খিদে পেলে এক কাপ দুধ ও দুই পিস ফাইবার বিস্কুট খান।
# সতর্ক থাকুন ক্যালোরির ব্যাপারে।
# ফলের রসের বদলে খান গোটা ফল। মিষ্টি পানীয় খান যথাসম্ভব কম।
# চিনির বদলে আর্টিফিসিয়াল সুইটনার খাবেন না। কারণ এতে ব্রেন তৃপ্ত হয় না বলে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে বেড়ে যায়। তেমন হলে চা খান অল্প চিনি দিয়েই। দিনভর তাহলে সন্দেশ–রসগোল্লার মধ্যে তৃপ্তি খুঁজে বেরোতে হবে না।
# টিভি দেখুন কাজ করতে করতে। বিজ্ঞাপন বিরতিতে, সম্ভব হলে একটু ঘুরে নিন।
# দুপুরে খাওয়ার পর ১০–১৫ মিনিটের বেশি ঘুমাবেন না।
# ৩০–৪০ মিনিট জোর কদমে হাঁটুন। দৌড়োন বা সাঁতার কাটুন, সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন। এতে মানসিক চাপ ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, দুই–ই কমে।
# রক্তচাপ বেশি থাকলে ধূমপান ও ওজনের ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকুন।