নির্বাচনে বাবা মা ভাই বোন স্ত্রী পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে মাঠে নামেন । কিন্তু পঞ্চগড় জেলায় ইউপি নির্বাচনে একটি ভিন্নধর্মী প্রচারনা দেখা গেছে।
পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের মেহের পাড়া গ্রামের মাছচাষী দেলোয়ার হোসেন (৪০)। তিনি শাহিনা আক্তার (৩২), আকলিমা বেগম (২৪) ও রত্না বেগম (২১) নামে তিন বউয়ের একজন গর্বিত স্বামী।
তিন জনই গৃহিনী। তবে ঝগড়া বা কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই তিন বউকে নিয়ে সুখের সংসার দেলোয়ার হোসেনের। এদের মধ্যে বড় বউ শাহিনা আক্তার এলাকাতেও বেশ জনপ্রিয়।
তাই বড় বউ শাহিনা আক্তারকে আসন্ন ইপি নির্বাচনে ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাতে চান দেলোয়ার হোসেন।
স্থানীয়দের ধারণা, সতীনের সংসার মানেই ঝ;গ;ড়া আর ঝামেলার সংসার। এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দেলোয়ার হোসেন ও তার তিন স্ত্রী। এক মেয়ে ও তিন ছেলেসহ আট জনের সংসার দেলোয়ারের।
সাংসারের নানা জটিলতা তারা কথা বলে সমাধান করেন। সংসারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে শাহিনা আক্তারের জনপ্রিয়তার কারণে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান তিনি। তার পাশে দাড়িয়ে নানাভাবে সহযোগীতাও করছেন স্বামীসহ বাকি দুই সতীন।
পারিবারিক সম্মিলিত সিদ্ধান্তে ঐক্যবদ্ধভাবে বড় বউ শাহিনা আক্তারের জন্য দোয়া চেয়ে দেলোয়ার তার তিন স্ত্রীকে নিয়েই বিভিন্ন গ্রামের ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন।
স্বামীর সাথে তিন সতীনের একসাথে হাসিখুশি চলার এমন ঘটনা স্থানীয়ভাবে বিরল। বড় সতীনের জন্য দুই সতীনের এই দোয়া আর ভোট চাওয়া এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
চলমান ইউপি নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে দেশের বিভিন্ন ইউপির সাথে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদেও নির্বাচনী তফশীল ঘোষনা করা হয়েছে।
তফসিল অনুযায়ি ২৮ নভেম্বর পঞ্চগড় সদর ও আটোয়ারী উপজেলায় ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে আটোয়ারী উপজেলার ৪ নং রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদে ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করতে চান শাহিনা আক্তার। নির্বাচনের মনোনয়পত্র দাখিল করা না হলেও তফশীল ঘোষনার পর থেকেই তিন সতীন তাদের স্বামীর সাথে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
দিনরাত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দোয়া চাচ্ছেন। প্রতিদিন সকালে বের হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন ওয়ার্ডের বিভিন্ন মহল্লায় ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ছুটে বেড়ান তারা। ছোট সতীন রত্না বেগম বলেন, আমরা স্বামীসহ তিন সতীন মিলে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি।
আমাদের একত্রিতভাবে এই প্রচারণা করতে দেখে অনেকেই অবাক হচ্ছেন। আমাদের নিয়ে স্থানীয় ভোটার ইতিবাচক আলোচনা করছেন। আমাদের বড় আপা (বড় সতীন) এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। আশা করি
মেজো সতীন আকলিমা বেগম বলেন, আমার স্বামী তিনটা বিয়ে করেছেন। সবাই আমরা একসাথে বসবাস করি এবং সুখেই আছি। এবারের ইউপি নির্বাচনে আমরা আলোচনা করে বড় আপাকে (বড় সতীন) ভোটে দাড় করিয়ে দিয়েছি। তাই তাকে জয়যুক্ত করতে আমরা একত্রিত হয়ে কাজ করছি।
সংরক্ষিত নারী সদস্য পদের প্রার্থী শাহিনা বেগম বিডি২৪লাইভকে বলেন, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আমার দুই বোন (দুই সতীন) ও স্বামীর পরামর্শে সংরক্ষিত নারী সদস্য হিসেবে ভোট করতে চাই।
সুখে দুঃখে আমরা তিন সতীন একে অপরের পাশে দাড়াই। এজন্য তারাও সব সময় আমার পাশে থাকেন। আমি এলাকাতে বেশ পরিচিত। মানুষের মাঝে নিজেকে আরও পরিচিত করতে সকলের কাছে গিয়ে দোয়া চাচ্ছি। প্রচারণায় এলাকার মানুষের অনেক সহযোগিতা পাচ্ছি। আশা করি আমি জয়লাভ করবো।
তিন স্ত্রীর গর্বিত স্বামী দেলোয়ার হোসেন বিডি২৪লাইভকে বলেন, আমি খেটে খাওয়া মানুষ। এখন মাছ চাষ করে সংসার চালাই। ১৬ বছর আগে প্রথম বিয়ে করি। এরপর ১৩ বছর আগে দ্বিতীয় এবং প্রায় ছয় বছর আগে তৃতীয় বিয়ে করি।
বর্তমানে তিন বউ ও চার সন্তান নিয়ে সুখে শান্তিতে আছি। আমি বিভিন্ন সময় এলাকার মানুষদের নানা সমস্যায় এগিয়ে গিয়েছি।
জনসেবামুলক কাজে আমার স্ত্রীরাও আমাকে সমর্থন দেন। আমার বড় স্ত্রী এলাকায় বেশ পরিচিত এবং জনপ্রিয়। তাই তাকে জনগণের সমর্থন নিয়ে সংরক্ষিত নারী সদস্য হিসেবে ভোটে দাড় করাতে চাই।
যাতে গরীব, দুঃখি ও খেটে খাওয়া মানুষের সেবা করা যায়। গণসংযোগ চলাকালিন স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এবং ভোটারদের বেশ সাড়া পাচ্ছি। আশা করি আমরা জয়ী হবো।