শুষ্ক মৌসুমে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তায় পানি হু হু করে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। এদিকে পানির তোড়ে তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাট বাইপাস হুমকির মুখে পড়েছে।
বুধবার (২০ অক্টোবর) সকাল ৯ টায় দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫৩ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তায় পানিবৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের তিন উপজেলায় তিস্তার চরাঞ্চলে ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার হেক্টর জমির ধানক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে রাস্তাঘাট।
এদিকে বুধবার ভোর থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে তিস্তার চরাঞ্চলের ভয়াবহ বন্যার দেখা দিয়েছে। ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ঘরবাড়ি ছেড়ে পানিবন্দি পরিবারগুলো উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
কার্তিক মাসের শুষ্ক মৌসুমে হঠাৎ এমন বন্যা দেখেনি তিস্তাপারের বাসিন্দা। গত রাত থেকে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘরবাড়িতে হু হু করে পানি প্রবেশ করায় পরিবারগুলোর মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তিস্তা শুকিয়ে জেগে উঠেছিল চর। হঠাৎ তিস্তার পানিতে সব ডুবে গিয়ে তিস্তা ফিরে পেয়েছে নতুন যৌবন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারাজ পয়েন্টে ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। বুধবার সকাল ৯ টায় পয়েন্টে ৫৩ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তাচরের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
জানা গেছে, তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বাড়ি ঘরে পানি উঠে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১০ হাজার পরিবার। এদিকে পানির তোড়ে ভেঙে গেছে রাস্তাঘাট, তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কয়েক হেক্টর ফসলি জমির ধানক্ষেত।
এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী,নোহালী, চর বৈরাতি ও আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মফিজার রহমান বলেন, এই শুষ্ক মৌসুমে এমন বন্যা দেখা আর দেখা যায়নি। গত দুই মাস আগে এ নদী শুকিয়ে গিয়েছিল আজ নদীতে ভরপুর পানি অনেক পরিবার উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে অনেক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে।
পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম এলাকার মাইদুল ইসলাম বলেন, রাত থেকে হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে ধানক্ষেতসহ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে অনেক পরিবার উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউ দৌলা বলেন, উজানের ঢলে ও ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তাপারের মানুষদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া জন্য বলা হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বিষয়টা আমরা জেনেছি। পানিবন্দি পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য সহায়তা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা পানিবন্দি পরিবারগুলোর সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন।
সূত্র : ইত্তেফাক