ফেনীর দাগনভূঞার সৌদি আরব প্রবাসী মো. একরাম হোসেন শাহিন (২৬) ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি আসার পথে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মোগড়াপাড়ায় ডাকা;তের কবলে পড়ে সর্বস্ব খুইয়ে এখন দিশেহারা। ঘটনাটি বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ভাড়া গাড়িতে বাড়ি আসার পথে ঘটে। ডাকাতের কবলে পড়ে সবকিছু খোয়ানোর পর মহাসড়কে বসে গড়িয়ে গড়িয়ে কাঁদতে থাকা এক যুবকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিষয়টি প্রকাশ পায়।
দিনরাত পরিশ্রম করেন এই প্রবাসী শ্রমিকরা। তাদের ঘামঝরা অর্থ বাড়িতে পাঠান স্বজনদের মুখে একটু হাসি ফোটাতে। দীর্ঘ তিন বছর পর এই যুবক অনেক স্বপ্ন নিয়ে প্রিয় স্বদেশে ফেরেন। কিন্তু প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দের সময় কাটানোর আগেই রাস্তাতেই সব হারাতে হলো তাকে। তখন অসহায়ের মতো আর্তনাদ করা ছাড়া তার জন্য আর কিছুই বাকি রইল না।
ক্ষতিগ্রস্ত শাহিন যুগান্তরকে বলেন, দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় পরিবারের হাসি ফোটানোর জন্য তার বাবা ধারদেনা করে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে বিদেশে পাঠান। প্রায় তিন বছর প্রবাস জীবনের ছুটি নিয়ে বৃহস্পতিবার দেশে আসেন। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি ফিরছিলেন। ওই দিন ভোরে সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া পৌঁছলে ডাকাতের কবলে পড়েন।
ডাকাতেরা তার ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট, আপডাউন টিকিট, ২টি লাগেজ ভর্তি মালামাল, নগদ ৫৭ হাজার টাকা, ২টি আইফোন, স্বর্ণালংকার, নগদ ২৫০ সৌদি রিয়ালসহ সর্বস্ব নিয়ে যায়। সর্বস্ব হারিয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি করে কান্নাকাটি করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।
শাহিন দাগনভুঞা পৌরসভাধীন আলাইয়ারপুর গ্রামের সিএনজিচালক লোকমান হোসেনের ছেলে। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে শাহিন ছোট। শাহিনের জন্য বিয়ের পাত্রী ঠিক করা হয়েছিল। সেই বিয়ে উপলক্ষে হবু স্ত্রীর জন্য গহনা, নতুন জামাকাপড় নিয়ে এসেছিলেন।
শুক্রবার পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা যুগান্তরকে বলেন, প্রবাসী ওই যুবকের সবকিছু লুটের ঘটনার পর যেসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে, সেসব ছবির সূত্র ধরে জড়িতদের খুঁজে বের করার জন্য স্থানীয় পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আশা করা যাচ্ছে, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতারে সক্ষম হবে পুলিশ।সোনারগাঁ থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান যুগান্তরকে জানান, ভিসাযুক্ত পাসপোর্টসহ মালামাল উদ্ধার ও ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। আশা রাখছি সফল অভিযানে সুখবর দিতে পারব।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই তপন কুমার বাকশী যুগান্তরকে জানান, ভিকটিমের অভিযোগ নেয়া হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তার ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট উদ্ধারে এবং লুটেরাদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। শাহিনের বাবা লোকমান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আমার সব স্বপ্ন তাসের ঘরের মতো উড়ে গেল।
দাগনভূঞা থানার ওসি ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ‘শাহিনের বাড়ি দাগনভূঞাতে হলেও ঘটনাস্থল সোনারগাঁ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। তারপরও আমরা সার্বক্ষণিক সোনারগাঁ থানার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।