পৃথিবীকে ঘিরে ফেলছেন এক ব্যবসায়ী

গোটা দুনিয়া এখন চলছে ইন্টারনেট প্রযুক্তির ওপর ভর করে। এই প্রযুক্তিকে আমূল বদলে ফেলে নতুনত্ব আনতে যাচ্ছে বিখ্যাত ধনকুবের এলন মাস্ক। তিনি পুরো পৃথিবীকে তার স্যাটেলাইট দিয়ে ঘিরে ফেলার উদ্যোগ দিয়েছে। মোট ৪২ হাজার স্যাটেলাইটের এক জাল তৈরি করছেন তিনি। উদ্দেশ্য, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৃথিবী সব অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া।

এজন্য এলন মাস্ক ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন স্পেসএক্স। মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠাতে তার এই বিশাল আয়োজন। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার এই প্রজেক্টের নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্টারলিংক প্রজেক্ট’। ৪২ হাজার থেকে তিনি ইতিমধ্যে ১৪৪৩টি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছেন তিনি। সবশেষ গেল ২৯ এপ্রিল একসঙ্গে ৬০টি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছেন।

এলন মাস্কের একত্রে এত স্যাটেলাইট পাঠানোকে বলা হচ্ছে ‘স্যাটেলাইট ট্রেন’।স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান নাসা। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বে প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। আর বিশ্বে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বেসরকারি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপক প্রতিষ্ঠান এলন মাস্কের স্পেসএক্স।

এলন মাস্ক ছিলেন মূলত অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে পেপাল এর মালিক। তিনি পেপাল বিক্রি করে দিয়ে স্পেসএক্স শুরু করেন। এলন মাস্কের বর্তমান সম্পদ ১৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার! এই অর্থ দিয়ে তিনি ভবিষ্যত ব্যবসা হিসেবে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠা করছেন।

স্পেসএক্স মূলত কাজ করে অন্যের হয়ে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাংলাদেশ একটা স্যাটেলাইট পাঠাবে মহাকাশে। কিন্তু রকেট পাঠাবার মতো কোনো স্টেশন বাংলাদেশে নাই। সুতরাং বাংলাদেশ যদি কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে স্যাটেলাইট বানিয়ে স্পেসএক্সের সাথে চুক্তি করে তাহলে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে সেই স্যাটেলাইট মহাকাশে পৌঁছে দিয়ে গতিশীল করে দেবে স্পেসএক্স।

আবার মহাকাশ স্টেশনে মানুষ বা কোনো দরকারি সামগ্রী যদি কারও পক্ষ থেকে পৌঁছে দেয়ার দরকার হয়, সেটাও তারা অর্থের বিনিময়ে করে থাকে। এই হচ্ছে স্পেসএক্স, তথা এলন মাস্কের আয়ের বর্তমান উল্লেখযোগ্য উৎস।

এখন প্রশ্ন হল, স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠাতে তো অনেক অর্থ লাগে। মোটামুটি ১ বিলিয়ন ডলারের আশেপাশে লাগে নাসার। স্যাটেলাইট পাঠাতে রকেট লাগে। এলন মাস্ক এতগুলো রকেট পাঠাচ্ছে। তার কত বিলিয়ন ডলার ইনকাম? তার ইনকাম যতই হোক, সেটা আমাদের মুখ্য ব্যাপার না। ব্যাপার হল এই এলন সাহেব প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ঘটিয়ে রকেট বানাবার ও উৎক্ষেপণ খরচ অনেকাংশে কমিয়ে আনলেন। মাত্র ৬২ মিলিয়ন ডলার দিয়েই তিনি বানিয়ে ফেললেন ফ্যালকন -৯ রকেট।

কোথায় ১ বিলিয়ন লাগে নাসার, আর কোথায় মাত্র ৬২ মিলিয়ন! সো, বুঝতেই পারছেন ব্যাপারটা কী। তো এই স্টারলিংক এর উদ্দেশ্য হল মহাকাশে ৪২,০০০ স্যাটেলাইট পাঠানো, যা দিয়ে পুরো পৃথিবীকে ঘিরে ফেলা যাবে। পৃথিবীর প্রতিটি আনাচেকানাচে ইন্টারনেটের রেঞ্জ তৈরি করা যাবে।

এলন মাস্ক সাহেব অনেক এগিয়েছেন। তিনি রকেট এর সফল পরীক্ষা চালিয়েছেন। স্যাটেলাইট পাঠাবার অনুমতি ও পেয়েছেন। প্রতিটা গ্রুপে ৬০টি করে স্যাটেলাইট তিনি উৎক্ষেপণ করেন স্পেসএক্সের মাধ্যমে। ইতিমধ্যে মহাকাশে পাঠিয়ে দিয়েছেন ১৫০০ টি স্যাটেলাইট, যা প্রদক্ষিণ করছে আমাদের পৃথিবীকে।

স্টারলিংক এর এই প্রোজেক্ট এর ফলে আমাদের কী লাভ হবে?পুরো দুনিয়াকে সেইম ইন্টারনেট প্রোভাইড করবে স্টারলিংক। যার গতি হবে ১০০ এমবিপিএস ও লেটেন্সি মাত্র ৩১এমএস। বোঝাই যাচ্ছে খুব দ্রুত গতির ইন্টারনেট এর আওতায় আসবে সবাই। আর নর্মালি আমাদের কাছে স্যাটেলাইট থেকে যেসব ইন্টারনেট আসে, সেই স্যাটেলাইট এর উচ্চতা ৩৫হাজার কিলোমিটার।

কিন্তু স্পেসএক্স এর রকেটের উচ্চতা থাকবার কথা মাত্র ৫ হাজার কি.মি.! এজন্য আমরা পেতে যাচ্ছি উচ্চগতির ইন্টারনেট! এরই ধারাবাহিকতায়, আজ স্টারলিংক এর আরো একগুচ্ছ রকেট যাবে মহাশূন্যে। রাত ৮টা ৫মিনিটে দৃশ্যমান হওয়ার কথা উত্তর-পশ্চিমের আকাশে।