করোনাকালে যাচাই-বাছাই পরীক্ষায় অকৃতকার্য তাই এসএসসির চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হবে না সাত শিক্ষার্থীকে। এসব পরীক্ষার্থীরা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ দেবনগর বেগম রোকেয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের।
এসএসসির ফরম ফিলআপের সময় শেষ পর্যায়ে থাকায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে ওই শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে এসএসসির ফরম পূরণ করে আসছে। শিক্ষকরা অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকে এই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছে।
যাদের ফরম পূরণ করতে দেওয়া হয়নি তারা হলো সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের দেবনগর গ্রামের অরবিন্দ সরকারের ছেলে সবুজ সরকার, একই এলাকার প্রসাদ সরকারের মেয়ে মৌ সরকার, সিন্ধু সরকারের মেয়ে তিথী সরকার, নারায়ণপুর গ্রামের মো. আবদুল মালেকের ছেলে আবদুর রহমান, ভাটপাড়া গ্রামের শাহজান দালালের ছেলে ইস্রাফিল ইসলাম, আখড়াখোলা গ্রামের সিদ্দিক গাজীর ছেলে মামুন, দেবনগর গ্রামের আমজেদ হোসেনের ছেলে আল-মামুন।
এসএসসি পরীক্ষার্থী সবুজ সরকার জানায়, আমরা জানতাম এবার কোনো পরীক্ষা হবে না। সরাসরি এসএসসি পরীক্ষা হবে। করোনা আতংকের মধ্যে স্কুলের শিক্ষকরা হঠাৎ একদিন ফোন করে স্কুলে আসতে বলেন। স্কুলে গেলে আমাদের কাছে পরীক্ষার খাতা আর কলম ধরিয়ে দিয়ে পরীক্ষা দিতে বলেন। স্কুলে আসার আগেও আমাদের পরীক্ষা নেওয়ার কথা জানানো হয়নি। পরে একদিন আবারো কয়েকজনকে ফোন করে হেড স্যারের বাড়িতে ডেকে নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়।
সে আরো জানায়, আমাদের বিদ্যালয় থেকে এবার ৬৫ জন শিক্ষার্থীর এসএসসির ফরম পূরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জন শিক্ষার্থী আমাদের বিদ্যালয়ের। বাকী ৩০ জন শিক্ষার্থী অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। সে এ সময় অভিযোগ করে, তাদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে শিক্ষকরা তাদের ফরম পূরণ করেছেন।
আরেক শিক্ষার্থী তিথী সরকার জানায়, শুনেছি কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ফোন করে স্কুলে ডেকে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে কিন্তু আমাদের কোনো পরীক্ষাও নেওয়া হয়নি, ফোনও করা হয়নি। আমরা শ্রেণি শিক্ষকের কাছে ফরম পূরণের কথা জানতে চাইলে তিনি প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। আর প্রধান শিক্ষকের কাছে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন শ্রেণি শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করতে। এভাবে আমাদের ঘুরানো হচ্ছে।
কেন তাদের ফরম পূরণ করা হবে না এমন প্রশ্নের জবাবে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলম জানান, ওই শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করা হচ্ছে না দুইটা সমস্যার কারণে। প্রথম সমস্যা হল গত কয়েকদিন আগে তাদেরকে একটি যাচাই বাছাই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তারা খুবই কম নাম্বার পাওয়ায় তাদের ফরম পূরণ করতে দেওয়া হয়নি।
দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে আমরা যদি শতভাগ পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে পাঠাই তাহলে সেখান থেকে যদি ৭৫ শতাংশের কম পরীক্ষার্থী পাস করে তাহলে আমাদের বেতন বন্ধ হয়ে যাবে। এমনকি স্কুলের এমপিও বাতিল হয়ে যেতে পারে। এজন্য তাদের ফরম পূরণ করা হবে না বলে জানান তিনি।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান জানান, দীর্ঘ ১৮ বছর পরে আমাদের বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হয়েছে। এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী ৪টি শর্ত সাপেক্ষে এমপিওভুক্ত করা হয়। পাসের হার সরকারী নীতিমালার নিচে আসলে আমাদের এমপিও বাতিল হতে পারে। এই আশংকায় দুর্বল শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করতে দেওয়া হচ্ছে না। অবৈধ সুযোগ সুবিধার কোনো প্রশ্নই আসে না।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি শেখ শফি আহমেদ জানান, আমি তো এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানি না। আমি শিক্ষকদের সাথে পরামর্শ করে বিষয়টি দেখব।