সয়েল কম্পেক্টরের (বিশেষ ধরনের রোলার মেশিনের) চালকের আসনে মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম। সামনে-পিছনে অবিরাম চালিয়ে যাচ্ছেন যন্ত্রটি। ঘর্মাক্ত শরীরে যখন মেয়র সয়েল কম্পেক্টর নামলেন, তখন রাত আড়াইটা। গত মঙ্গলবার এ দৃশ্য দেখা যায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হায়দারাবাদ-বনমালা সড়কে।
গভীর রাতে মেয়রের সয়েল কম্পেক্টর চালানোর দৃশ্যটি রাশেদুল ইসলাম নামে এক যুবক ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুকে) পোস্ট করেন। মুহুর্তে ওই ভিডিও ভাইরাল হয়। আর আগে গত জানুয়ারিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে মোটরসাইকেলে বসিয়ে মেয়রের মোটরসাইকেল চালানোর ভিডিও ব্যাপক ভাইরাল হয়েছিল।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসএম সফি জানান, গাজীপুর-হায়দারাবাদ-বনমালা সড়কটি ঢাকা-ময়সনসিংহ মহাসড়কের বিকল্প সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যানজট এড়িয়ে সহজে রাজধানীতে যাতায়ত করা যায় বলে সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু হায়দারাবাদ ব্রিজ থেকে বনমালা রেল গেইট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার অংশ ঢাকা-গাজীপুর ডাবল রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে পড়েছে।
ওই দেড় কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই ছিল রেলপথ ঘেষেঁ। ডাবাল রেল লাইন বসানোর কাজ শুরু করায় ৩-৪ মাস ধরে সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ। এতে চরম দুভোর্গে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দা ও দূরদুরান্তের হাজারো যানবাহন। খবর পেয়ে উদ্যোগ নেন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ১৫-১৬ ফুট গভীর বিল ভারাট করে নতুন সড়ক তৈরি করে ঈদের আগেই খুলে দিতে কাজ শুরু করেন। চলে দিনরাত মাটি ফেলা ও সয়েল কম্পেক্টর (রোলার) দিয়ে শক্ত করার কাজ।
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় কাজ পরিদর্শনে গিয়ে মেয়র দেখতে পান একাধারে চালাতে চালতে রোলার চালক ক্লান্ত। এরপর চালকেকে বিশ্রামে পাঠিয়ে নিজেই উঠেন রোলারে। বসেন চালকের আসনে। দুই ঘণ্টা রোলার চালিয়ে নামেন রাত আড়াইটায়। এরপর থেকে মেয়র প্রতিদিন রাতে এক-দেড় ঘণ্টা নিজেই সয়েল কম্পেক্টর চালাচ্ছেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও কৌতুহলের সৃষ্টি হয়। একজন মেয়র রোলার মেশিন চালাবেন, তাও দুই-আড়াই ঘণ্টা তা নগরবাসীর কল্পনাতেও ছিল না। মূলত রোলার চালকের সংকট রয়েছে। তাই কাজ যাতে থেমে না থাকে সেজন্য মেয়র নিজেই প্রতি রাতে সময় দিচ্ছেন। এতে কাজের সাথে জড়িত অন্যরাও উৎসাহ পাচ্ছেন।
টঙ্গীর বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনি সরকার বলেন, গাজীপুর দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন। দেশের সব মেয়রদের মধ্যে গাজীপুরের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম সবচেয়ে তরুণ। নির্বাচিত হওয়ার আড়াই বছরের মধ্যে তিনি প্রায় ৬ শতাধিক সড়ক ও ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করেন।
এসব সড়কের দৈর্ঘ প্রায় ৭ হাজার কিলোমিটার। অধিকাংশ সড়ক নির্মাণ শেষ হয়েছে। এছাড়াও কালভার্ট, সড়কবাতি, স্বাস্থ্য সেবাসহ নানামুখি কাজের মধ্যে দিয়ে তিনি একের পর এক চমক সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। বদলে দিচ্ছেন গাজীপুর নগরী। সয়েল কমপেক্ট মেশিন চালিয়ে তিনি আবারো প্রমান করলেন ‘যিনি রাধেন, তিনি চুলও বাঁধেন’।
সূত্র : কালের কণ্ঠ