অল্পদিনে যেভাবে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক যুবলীগ নেতা

হাসানুল ইস’লাম আদর বয়স ৩০ এর কাছাকাছি। বাড়ি চকরিয়া উপজে’লার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বৈরাখিল গ্রামে। তিনি নিজেকে কখনো এমপির এপিএস, কখনো কেন্দ্রীয় নেতার সাথে স’ম্পর্ক, কখনো যুবলীগ নেতা, আবার সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মক’র্তার সঙ্গে গভীর সখ্যতার পরিচয় দিয়ে নানা অ’পকর্ম ও প্রতারণা করে আসছে এই আদর।

এক সময়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও বর্তমানে এক প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতার ছত্রছায়ায় দল পাল্টিয়ে এখন যুবলীগ নেতা বনে গেছেন! এভাবে নানা অ’পকর্ম করে অল্পদিনে প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালিক বনে গেছে সে।

হাসানুল ইস’লাম আদর চকরিয়া উপজে’লার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বৈরাখির এলাকার বাসিন্দা মকছুদ আলম মেস্ত্রী’র পুত্র। তার পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জ’ড়িত। তার বড় ভাই হাবিবুল ইস’লাম নয়ন সাবেক ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ও তার পিতা মকছুদ ওই ওয়ার্ডের বিএনপির বর্তমান সভাপতি।

জানা যায়, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের দক্ষিণ পার্শে পূর্ব মাইজপাড়ায় বগাছড়ি ছড়ার উপর সড়ক ও জনপথ বিভাগের বেইলি ব্রিজ নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও নিন্মমান সামগ্রী ব্যবহারের সংবাদ সংগ্রহ করতে যান সাংবাদিক আবদুল মজিদ, মোহাম্ম’দ উল্লাহ ও মনসুর মহসিন। পরবর্তীতে নির্মাণ কাজে অনিয়মের সংবাদটি অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হলে ক্ষেপে যান আদর। পরে সাংবাদিককে মোবাইল ফোনে প্রা’ণনাশের হু’মকি দেয় আদর।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, হাসানুল ইস’লাম আদর নিজেকে বর্তমান এমপি জাফর আলমের পিএস পরিচয় দিয়ে ডুলাহাজারা ইউনিয়ন যুবলীগের ৪নং যুগ্ম আহ্বায়কের পদটি বাগিয়ে নেন।

একদিকে এমপির পিএস, অন্যদিকে যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পেয়ে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আদরকে। পাহাড় কে’টে মাটি বিক্রি, নদী ও ছড়া খাল থেকে বালি উত্তোলন, ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নেয়াসহ এমন কোনো কাজ নেই তিনি করেন না।

তার যুবলীগের পদ নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। দুই মাসের জন্য কমিটি অনুমোদন দিলেও বর্তমানে ওই কমিটির মেয়াদ চার বছর অ’তিবাহিত হয়েছে। উপজে’লা যুবলীগ থেকে বিভিন্ন সময় সম্মেলনের তাগাদা দিলেও নিজেকে বর্তমান এমপির পিএস পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করে এড়িয়ে যান এই যুবলীগ নেতা।

চকরিয়া থা’নার সম্মুখে রয়েছে তার আলীশান অফিস। চড়েন পাজেরো গাড়িতে। ওই অফিস থেকে নিয়ন্ত্রণ করেন নানা অ’পকর্ম। নিজেকে পিএস পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা নিয়মিত অভ্যাস তার। মানুষকে মা’মলা দেওয়া এবং অব্যাহতি দেওয়ার নামের প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অ’ভিযোগও রয়েছে তার বি’রুদ্ধে। তার নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। তিনি বিভিন্ন সময় নিরীহ মানুষকে, এমনকি নিজ দলের লোকজনকে মা’মলার ভ’য় দেখিয়ে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। এভাবে নিরীহ সাধারণ মানুষকে তিনি প্রতিনিয়ত হয়’রানি করতেন। বর্তমানে আদর নানা অনিয়ম ও দু’র্নীতি করে এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।

তার ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা যায়, চকরিয়া পৌরসভা’র ৯নং ওয়ার্ডের পুকপুকুরিয়ায় স্ত্রী’র নামে ১৩ কড়া জমি, পৌরসভা’র ৪নং ওয়ার্ডের ভরামুহুরী উপজে’লা আওয়ামী লীগের অফিসের পাশে ২২ কড়া মূল্যবান জমি ক্রয় করেছেন আদর। মাতামুহুরী ব্রিজের পাশে দুটি পয়েন্ট, চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা, সাহারবিল ইউনিয়নের পরিষদের পাশে ১টিসহ মাতামুহুরী নদীর অন্তত ১০-১৫টি পয়েন্ট থেকে কোটি কোটি টাকার অ’বৈধভাবে বালি উত্তোলন করে যাচ্ছেন এই আদর।

ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের সামনে তার মালিকাধীন একটি উন্নতমানের সাফারি ক্যান্টিন রয়েছে। এছাড়াও তার বি’রুদ্ধে বনভূমি দস্যুতারও অ’ভিযোগ রয়েছে। তার নেতৃত্বে উপজে’লার খুটাখালী ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের অন্তত অর্ধশতাধিক পাহাড় উজাড় করা হয়েছে। রেললাইনের নির্মাণ কাজে বনভূমির মাটি বিক্রি করে সম্পদ প্রচুর গড়েছেন।

এদিকে খুটাখালী ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মানুষ তার অ’ত্যাচারে অ’তিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তার এসব অ’পকর্মের বি’রুদ্ধে কেউ মুখ খোলে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। প্রতিবাদ করলে তাদেরকে বিভিন্ন মা’মলা দিয়ে হয়’রানি করা হয়। তার অ’ত্যাচারে অনেক পরিবার ঘর ছাড়া হয়েছেন।

হাসানুল ইস’লাম আদর নতুন করে আলোচনায় এসেছেন চকরিয়ার কর্ম’রত চার সাংবাদিককে প্রা’ণনাশের হু’মকি দিয়ে। সাংবাদিকরা তার অনিয়ম ও লুটপাটের সংবাদ পরিবেশন করতে গিয়ে প্রা’ণনাশের হু’মকি দিয়ে যাচ্ছেন ওই যুবলীগ নেতা।

এ ব্যাপারে উপজে’লা যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইস’লাম শহিদ ও সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কচির জানান, সাংবাদিকদের হু’মকির বিষয়টি প্রমাণিত হলে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের দায়ে তার বি’রুদ্ধে সাংগঠনিক বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ডুলাহাজারা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়কের পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হবে।

হাসানুল ইস’লাম আদরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কারো বি’রুদ্ধে থা’নায় জিডি করিনি। আমাকে জড়িয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে যে মিথ্যাচার ছড়ানো হচ্ছে তা ভিত্তিহীন।ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, তার পরিবারটি বিএনপি সম’র্থিত। হাসানুল ইস’লাম আদরের আর্থিক অবস্থা এক সময় খুবই দুর্বল ছিল। বর্তমানে নানা অ’পকর্ম করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছেন। এলাকায় তার কোনো ভিত্তি নেই। সাংবাদিকদের হু’মকির বিষয়টি তিনি সংবাদ পত্রের মাধ্যমে জেনেছেন বলে জানান।

চকরিয়া থা’নার ওসি শাকের মোহাম্ম’দ যুবায়ের বলেন, সাংবাদিকদের বি’রুদ্ধে কোনো জিডি বা অ’ভিযোগ দেয়নি কেউ। তবে সাংবাদিকদের কেউ হু’মকি দেওয়ার প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপরও ৩ জন সাংবাদিকের আবেদনের প্রেক্ষিতে থা’নায় পৃথক ৩টি সাধারণ ডায়েরি রুজু করা হয়েছে।

জানতে চাইলে চকরিয়া-পেকুয়া আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য জাফর আলম বলেন, হাসানুল ইস’লাম আদর নামে তার কোন পিএস বা এপিএস নেই। পিএস ও এপিএস হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন মো. আমিন চৌধুরী ও সালেহ আহম’দ সুজন। এ ধরনের পরিচয় দিয়ে কেউ কোনো অ’পকর্ম করলে তার দায়-দায়িত্ব আমা’র নয়।