যে শর্তে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রীকে বিয়ে করেন মামুনুল

বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেফতার হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনটি বিয়ের কথা স্বীকার করেছেন। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছেন, প্রথম স্ত্রী বাদে বাকি দুই স্ত্রীকে তিনি ‘কন্টাক্ট ম্যারেজ’ করেছিলেন। স্ত্রীর পূর্ণ অধিকার দিতে পারবেন না মৌখিক এই শর্তেই তাদের বিয়ে করেছিলেন। তার দেওয়া শর্ত মেনেই দুই নারী তার সঙ্গে শরীয়তের বিধান মতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

জানা গেছে, রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর হেফাজত নেতা মামুনুল হককে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সহিংসতায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগের পাশাপাশি তিনটি বিয়ে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

গ্রেফতারের পর তাকে প্রথমে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয় এবং পরে তেজগাঁও থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। রাতে তাকে হস্তান্তর করা হয় গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। সোমবার দুপুরে তার বিরুদ্ধে রাজধানী মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী।

মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদ বিষয়ে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা তাকে মামলা, জিডিসহ সহিংসতার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাকে তিন তিনটি বিয়ে করা নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিয়ে দাবি করলেও প্রথমটি বাদে বাকি দুই বিয়ের প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি তিনি।

এদিকে রাতে মামুনুল হককে থানা পুলিশের কাছ থেকে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে আরেক দফা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এসময়ও তাকে সহিংসতার পাশাপাশি তিন বিয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রথম স্ত্রীকে তিনি শরীয়ত সম্মত ও প্রচলিত আইন মেনে বিয়ে করেছেন। কিন্তু বাকি দুই নারীকে বিয়ের দাবি করলেও কাবিননামা নেই বলে জানান তিনি। এই দুই নারীকে তিনি ‘কন্টাক্ট ম্যারেজ’ করেছিলেন বলে দাবি করেন মামুনুল হক।

জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল হকের দাবি, জান্নাত আরা ঝর্ণার বিচ্ছেদ হওয়ার পর তিনি তার অভিভাবকত্ব নেন। এসময় তিনি জান্নাতকে পূর্ণ স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবেন না এমন মৌখিক শর্তে বিয়ে করেন বলে দাবি করেন। তার শর্ত জান্নাত আরা মেনে নিয়েছিল। দুই বছর ধরে তিনি জান্নাত আরার ভরণ-পোষণ ছাড়াও ব্যবসা করার জন্য মূলধন দিয়েছেন এবং কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন।

একই শর্তে তৃতীয় স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস লিপিকেও বিয়ে করেন দাবি করে মামুনুল জানান, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে একসঙ্গে অনার্স ও মাস্টার্স করার সময় তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। এরপর জান্নাতুলের বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তাকেও স্ত্রীর অধিকার না দেয়ার মৌখিক শর্তে তাকে বিয়ে করেন তিনি।

তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রী দাবি করা নারীদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তার প্রথম স্ত্রী কিছুই জানতেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।স্ত্রীর মর্যাদা না দিলে কেন বিয়ে করেছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মামুনুল হক বলেন, স্ত্রীর মর্যাদা না দেওয়ার শর্ত দিয়েই তিনি বিয়ে করেছিলেন। ইসলামে এটা জায়েজ রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

প্রথম স্ত্রীর কাছে দ্বিতীয় স্ত্রীকে ‘শহীদুল ভাইয়ের ওয়াইফ’ বলার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মামুনুল হক জানান, বিষয়টি জানার পর তার প্রথম স্ত্রী যদি স্ট্রোক বা খারাপ কিছু একটা করে ফেলে সেই আতঙ্ক থেকে মিথ্যা বলেছিলেন তিনি।