মোদির ঢাকা সফরে ভারতের স্বার্থও কম নয়

করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম বিদেশ সফর হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। বাঙালির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দুইদিনের সফরে আগামী ২৬ মার্চ ঢাকায় আসছেন তিনি।

মোদির এই সফরে ভারতীয়দের রাজনৈতিক স্বার্থ নিয়ে আলোচনা হয়েছে ঢের, কিন্তু এর সঙ্গে দেশটির অর্থনৈতিক স্বার্থও কম নয়। মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত এবং এর প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির গুরুত্ব তুলে ধরছে মোদির ঢাকা সফর।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ। এ অঞ্চলে ভারতীয়দের সবচেয়ে বেশি পণ্য রফতানিও হয় বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশের জন্য চীনের পরেই আমদানির দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসের নাম ভারত।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ভারতীয়দের পণ্য রফতানির পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের, একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে তারা আমদানি করে ১.০৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

দ্য ইকোনমিক টাইমসের কথায়, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ভারতের বৃহৎ কোনও রাজ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের উদীয়মান বাজার। মারিকো, ইমামি, ডাবর, বার্জার পেইন্টস।

এশিয়ান পেইন্টস, পিডিলাইট ইন্ডাস্ট্রিজ, গোদরেজ কনজ্যুমার প্রোডাক্টস, সান ফার্মা, টাটা মোটরস এবং হিরো মোটোকর্প-এর মতো অনেক ভারতীয় প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশ থেকে অর্থ আয় করছে।

সেক্ষেত্রে, যেসব প্রতিষ্ঠান ভারতের বাইরে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায়, তারা বাংলাদেশের দিকে আগ্রহী হওয়াটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশে তাদের জন্য একটি দ্রুত বর্ধনশীল ভোক্তাবাজার রয়েছে।

যার সঙ্গে ভারতীয় বাজার অনেকটাই মিলে যায় এবং যাকে প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই বুঝতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, মারিকো হলো সেইসব ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের একটি, যারা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটির ভাষ্যমতে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোরও অবদান রয়েছে। তারা এদেশে অবকাঠামো নির্মাণ এবং কারখানা স্থাপন করছে।

চড়া আমদানি শুল্কের কারণে ভারতের অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের পণ্যগুলো ‘বাংলাদেশে রফতানি’র চেয়ে ‘বাংলাদেশে তৈরি’ বেশি স্বস্তিদায়ক মনে করছে। ফলস্বরূপ, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দেশটি ক্রমেই একটি বর্ধনশীল উত্পাদন কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে।

বাংলাদেশে বার্জার পেইন্টস, এশিয়ান পেইন্টস এবং সান ফার্মার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কারখানা রয়েছে। মিরসরাইয়ের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৪৫০ একর জমিতে কাজ করছে ভারতের বন্দর পরিচালনাকারী বৃহত্তম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেড’।

এশিয়ান পেইন্টস মিরসরাইয়ে তাদের দ্বিতীয় উৎপাদন ইউনিটের কাজ শুরু করেছে। এলএন্ডটি, বিইএমএল এবং বিএইচএল-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে অবকাঠামো নির্মাণের আদেশ পেয়েছে।

দ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বাংলাদেশ সরকারের ডাকা আন্তর্জাতিক দরপত্রগুলোতে অংশ নিতে পারে, তার জন্য প্রতিবেশী দেশটির ওপর চাপ দিচ্ছে ভারত।

তারা বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানিতে শুল্ক কমানোরও দাবি জানিয়েছে। এসব বিষয়ে সমঝোতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে নরেন্দ্র মোদির এবারের ঢাকা সফর।