শাবান আরবি বর্ষপঞ্জির অষ্টম মাস। শাবানের পরবর্তী মাস রমজান। আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে রোজা ফরজ করেছেন। আর রমজানের রোজার প্রস্তুতি হিসেবে প্রিয়নবী (সা.) শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি নবী করিম (সা.)-কে শাবান মাসের মতো এত বেশি (নফল) রোজা অন্য কোনো মাসে রাখতে দেখিনি। এ মাসের অল্প কয়েক দিন ছাড়া বলতে গেলে পুরো মাসই তিনি রোজা রাখতেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৩৭)
শাবান মাসে মানুষের উদাসীনতা : শাবান মাসকে রাসুল (সা.) বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। এ মাসের বেশির ভাগ দিন তিনি রোজা রাখতেন। উসামা বিন জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছি, হে আল্লাহর রাসুল, শাবান মাসে আপনি যেভাবে রোজা রাখেন, সেভাবে অন্য কোনো মাসে রোজা রাখতে আমি আপনাকে দেখিনি। রাসুল (সা.) বলেন, রমজান ও রজবের মধ্যবর্তী এ মাসের ব্যাপারে মানুষ উদাসীন থাকে। এটা এমন এক মাস, যে মাসে বান্দার আমলকে বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই, আল্লাহর কাছে আমার আমল এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার।’ (নাসাঈ)
এ হাদিস থেকে তিনটি বিষয় জানা যায়, এক. শাবান মাসের বেশির ভাগ দিন রাসুল (সা.) রোজা রাখতেন। দুই. এ মাসের ব্যাপারে সাধারণত মানুষ উদাসীন ও নির্লিপ্ত থাকে। তিন. এ মাসে বান্দার আমল আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করা হয়।
শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখা : এ মাসের বেশির ভাগ দিন রাসুল (সা.) রোজা রাখতেন। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আবু সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোজা অন্য কোনো মাসে রাখতেন না।’ (বুখারি)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য একটি হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (সা.) কখনো কখনো ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখতেন। আমরা বলতাম, তিনি মনে হয় আর কখনো রোজা ছাড়বেন না। আবার কখনো এভাবে রোজা রাখা ছেড়ে দিতেন যে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি মনে হয় আর কখনো রোজা রাখবেন না। রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে আমি রাসুল (সা.)-কে পুরো মাস রোজা রাখতে দেখিনি। শাবান মাসের মতো অন্য কোনো মাসে এত অধিক রোজা রাখতে আমি রাসুল (সা.)-কে দেখিনি।’ (মুসলিম)
মানুষের উদাসীনতা : এ মাসের ব্যাপারে মানুষের অবহেলা ও উদাসীনতা। শুধুু শাবান মাস নয়, আমরা স্বয়ং সর্বশ্রেষ্ঠ ও মহৎ রমজান মাসেই উদাসীন থাকি। নফল ও মুস্তাহাবের প্রতি তো গুরুত্ব দেওয়া হয় না, উপরন্তু অনেক সময় ফরজও ত্যাগ করা হয়। এসব ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত নিন্দনীয়।
মানুষের আমল উপস্থাপন : এ মাসে বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। আলেমদের বক্তব্য অনুযায়ী, বান্দার আমল আল্লাহর কাছে তিন স্তরে উপস্থাপন করা হয়। দৈনিক, সাপ্তাহিক ও বার্ষিক। দৈনিক বলতে প্রতিদিন ফজরের নামাজের সময় ও আসরের নামাজের সময় আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। বুখারি ও মুসলিম শরিফের একটি হাদিস থেকে জানা যায়, ফেরেশতারা রাতে ও দিনে পালাক্রমে মানুষের কাছে আসেন। রাত্রিবেলা যে ফেরেশতারা থাকেন, তাঁরা ফজরের সময় চলে যান। তখন দিনের ফেরেশতারা আসেন। তাঁরা আসরের সময় চলে যান। ফলে তখন আবার রাতের ফেরেশতারা আসেন। ফেরেশতারা যাওয়ার পর আল্লাহ তাআলা অধিক জ্ঞাত হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার বান্দাদের কোন অবস্থায় রেখে এসেছ? তাঁরা জবাব দেন, আমরা যখন তাদের কাছে পৌঁছি, তখন তারা নামাজরত ছিল। আর যখন তাদের কাছ থেকে ফিরে আসি, তখনো তারা নামাজরত ছিল।
সাপ্তাহিক বলতে প্রতি বৃহস্পতিবার আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বনি আদমের আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। কিন্তু আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এমন ব্যক্তির আমল কবুল হয় না।’ (মুসনাদে আহমদ)
আর বার্ষিক বলতে শাবান মাসে আল্লাহর কাছে বান্দার আমল পেশ করা হয়। এ কারণে পূর্ববর্তী আলেমরা এ মাসকে খুব গুরুত্ব দিতেন। আল্লামা ইবনে রজব (রহ.) বলেন, শাবান মাস হলো রমজান মাসের ভূমিকাস্বরূপ। রমজান মাসে যেভাবে রোজা রাখা এবং কোরআন তিলাওয়াতের বিশেষ ফজিলত রয়েছে, তদ্রুপ এ মাসেও রোজা রাখা ও কোরআন তিলাওয়াতের বিশেষ গুরুত্ব আছে, যাতে রমজান মাসের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের শাবান মাসকে গুরুত্ব দেওয়ার ও আমল করার তাওফিক দান করুন।