আনারস পছন্দ না, এমন লোক খুঁজে পাওয়াই কঠিন। শতাব্দী ধরে আনারসের ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু কয়জনই বা আনারসের গুণাবলীগুলি সম্পর্কে জানেন? আনারস শুধু যে খেতেই সুস্বাদু, তা কিন্তু নয়। আনারস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, সেই সঙ্গে হজম শক্তি বাড়ায়। এছাড়া হাড় শক্ত করে, প্রদাহ জনিত সমস্যা দূর করে, ঠাণ্ডা লাগা এবং কাশিতেও দারুণ উপকারী ভূমিকা নেয়। এমনকি অতিরিক্ত ওজন কমাতেও আনারস সাহায্য করে।আনারস খাওয়া শরীরে জন্য অত্যন্ত জরুরি। চলুন জেনে নেয়া যাক আনারসের পুষ্টি গুণ সম্পর্কে।
১. পুষ্টির অভাব দূর করে
আনারস পুষ্টির বেশ বড় একটি উৎস। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এই সকল উপাদান আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে আনারস খেলে দেহে এইসকল পুষ্টি উপাদানের অভাব থাকবে না।
২. হজমশক্তি বাড়ায়
আনারস আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ কার্যকরী। আনারসে রয়েছে ব্রোমেলিন যা আমাদের হজমশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
৩. হাড়ের সুস্থতায়
আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাংগানিজ। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ম্যাংগানিজ হাড়কে করে তোলে মজবুত। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পরিমিত পরিমান আনারস রাখলে হাড়ের সমস্যাজনিত যে কোনো রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৪. ওজন কমায়
শুনতে বেশ অবাক লাগলেও আনারস আমাদের ওজন কমানোয় বেশ সাহায্য করে। কারণ আনারসে প্রচুর ফাইবার রয়েছে এবং অনেক কম ফ্যাট। সকালের যে সময়ে ফলমূল খাওয়া হয় সে সময় আনারস এবং সালাদে আনারস ব্যবহার অথবা আনারসের জুস অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। তাই ওজন কমাতে চাইলে আনারস খান।
৫. চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায়
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে আনারস ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে। এই রোগটি আমাদের চোখের রেটিনা নষ্ট করে দেয় এবং আমরা ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যাই। আনারসে রয়েছে বেটা ক্যারোটিন। প্রতিদিন আনারস খেলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এতে সুস্থ থাকে আমাদের চোখ।
৬. দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায়
আনারসের ক্যালসিয়াম দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে। মাড়ির যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন আনারস খেলে দাঁতে জীবাণুর আক্রমণ কম হয় এবং দাঁত ঠিক থাকে।
এছাড়াও আনারস দেহের গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। গয়টার অর্থাৎ থাইরয়েড গ্রন্থির স্ফীত হওয়া প্রতিরোধ করে। নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চ রক্তচাপ। এটি আর্থরাইটিস উপশমে সহায়তা করে। তা ছাড়া কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। ক্ষুদ্রান্ত্রের জীবাণু ধ্বংসে উপকারী।
পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং মর্নিং সিকনেস অর্থাৎ সকালের দুর্বলতা দূর করে। এটি জরায়ু, স্তন, ফুসফুস, অন্ত্র ও ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বার্ধক্যজনিত চোখের ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে। আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী।
আনারসের পুষ্টিগুণ: আনারসে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম ব্রোমেলেইন। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’-পাওয়া যায়। এই ফলে আছে ম্যাঙ্গানিজ নামক খনিজ উপাদান, যা দেহের শক্তি বাড়ায়। আছে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন বি-১, যা শরীরের জন্য অপরিহার্য।
পাশাপাশি এই ফল খেলে শরীরে খুব কম ক্যালরি সঞ্চিত হয়। সুতরাং মুটিয়ে যাওয়ার ভয়ও থাকে না। প্রতি ১০০ গ্রাম আনারস থেকে পাওয়া যায় মাত্র ৫০ কিলোক্যালরি। তা ছাড়া এতে কোনো কোলেস্টেরলও নেই। এতে আছে পেকটিন নামক গুরুত্বপূর্ণ ডায়েটরি ফাইবার। ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্সের নানা উপদান যেমন ফলেট, থায়ামিন, পাইরিওফিন ও রিবোফ্লোবিনও পাওয়া যায় আনারস থেকে।