জিয়াউর রহমানের ক’বর সরবেই

জাতীয় সংসদ ভবন কমপ্লেক্স থেকে জিয়াউর রহমানের ক’বর সরানো হবেই বলে দৃঢ় আশা প্র’কাশ ক’রেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় স’স্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। সংসদ ভবন এলাকায় জিয়াউর রহমানের ক’বর প্রতিস্থাপনকে ‘ইডিয়টিক’ সিদ্ধা’ন্ত উল্লেখ করে সাবেক

পূর্তমন্ত্রী মোশাররফ বলেন, ‘আমি বিশ্বা’স করি চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে জিয়াউর রহমানের ক’বর সরবেই। একদিন না একদিন এটা সরানো হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক’বরস্থান এখান থেকে সরিয়ে লুই আই কানের নকশা বাস্তবায়ন করবেন বলেও তিনি আশা প্র’কাশ করেন।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ রবিবার বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক প্র’তিক্রিয়ায় এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জাতীয় মু’ক্তিযু’দ্ধ কাউন্সিলের সভায় জিয়াউর রহমানের মু’ক্তিযু’দ্ধের খেতাব বা’তিলের প্রসঙ্গক্রমে ক’বর সরানোর বিষয়টি উঠে আসে।

খেতাব বা’তিলের সিদ্ধা’ন্ত প্রস’ঙ্গে তিনি বলেন, ‘তার খেতাব পাওয়ারই কথা ছিল না। ওই সময় যাচাই-বাছাই না করে খেতাব দেওয়ার কারণেই এমনটি হয়েছে। ভালো করে যাচাই করে দেওয়া হলে জিয়াসহ আরও অনেকে হয়তো এ ধ’রনের খেতাব পেতেন না।’

সংসদ কমপ্লেক্স এলাকায় জিয়াউর রহমানের ক’বর প্রস’ঙ্গে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘একটা কমপ্লেক্স করা হয়েছে। তার মধ্যে কোনও ক’বরস্থান ছিল না। সেটাকে ক’বরস্থান করা হলো। জাতীয়ভাবে এটি ছিল একটি ইডিয়টিক সিদ্ধা’ন্ত। এখানে ব্য’ক্তি কোনও বিষয় নয়।

ডিজাইনে কোনও ক’বরস্থান নেই। সেটা কেন করা হলো? একেবারে সংসদ ভবনের নাক বরাবর ক’বর দেওয়া হলো। লুই আইকানের যে ডিজাইন আছে সেখানে ক’বরের কোনও অস্তিত্ব নেই। নকশা না মেনে ক’বরস্থানে যাওয়ার জন্য সেখানে একটি বেইলি ব্রিজও করা হলো।’

তিনি আশা প্র’কাশ করে বলেন, ‘লুই কানের নকশা এখন আমাদের কাছে আছে। নকশা অনুযায়ী সংসদের মধ্যকার কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আমি বিশ্বা’স করি, জিয়াউর রহমানসহ অন্যদের যে ক’বর আছে তা এখান থেকে সরানো হবে। প্রধানমন্ত্রী সংসদ কমপ্লেক্স এলাকার সব নকশাবহির্ভূত স্থাপনা সরিয়ে নকশার বাস্তবায়ন করবেন।’

প্রসঙ্গত, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে জিয়াউর রহমানের ক’বর সরানোসহ নকশাবহির্ভূত অন্যান্য স্থাপনা সরানোর ঘো’ষণা আসে। সে অনুযায়ী উদ্যো’গ নিয়ে ২০১৬ সালের শেষ দিকে লুই আই কানের নকশা দেশে আনা হয়। তবে নকশা আসার পর সে রকম কোনও কা’র্যকর পদক্ষে’প দেখা যায়নি।

সংসদ ভবন এলাকা থেকে জিয়াউর রহমানসহ অন্যদের ক’বর এবং অন্যান্য স্থাপনা সরিয়ে লুই আই কানের মূল নকশায় ফিরিয়ে আনতে বর্তমান সরকার বিগত মেয়াদের প্রথম দিকে (২০১৪ সালে) উদ্যো’গ গ্রহণ করে। ওই সময়ে সংসদ ভবন এলাকায় নকশাবহির্ভূত সব ধ’রনের নি’র্মাণকাজও ব’ন্ধ করে দেয় সরকার।

নকশার বাইরে সব ধ’রনের স্থাপনা ভা’ঙারও সিদ্ধা’ন্ত হয়। একই বছরের ১৭ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় জিয়াউর রহমানের ক’বর সংসদ ভবন এলাকা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধা’ন্ত হয়। ওই সময় লুই আই কানের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংসদ ভবনের মূল নকশা আনারও নির্দে’শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে সংসদ ভবন মূল নকশায় ফিরিয়ে আনতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রস্তাব পা’ঠানো হয়। তাতে বলা হয়, ‘শেরেবাংলা নগরে সংসদ ভবনের মূল নকশায় জিয়াউর রহমানের ক’বরের কোনও জায়গা নেই’। ওই প্রস্তাবে অন্যান্য নকশাবহির্ভূত স্থাপনাও সরানোর প্রস্তাব দেয় মন্ত্রণালয়।

পরে ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘো’ষণা দেন, সংসদ ভবনকে তার মূল নকশায় ফিরিয়ে আনা হবে। এ সময় নকশা ফেরত আনার উদ্যো’গের কথা উল্লেখ করে সংসদের প্রশ্নোত্তরে তৎকালীন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ

হোসেন বলেন, স্থপতি লুই আই কানের প্রণীত মূল নকশায় সংসদ ভবন চত্বরের কোথাও কোনও ক’বরের চিহ্নই ছিল না। কোথাও ক’বরস্থান দেখানো হয়নি। তবে আমাদের উদ্দেশ্য কারোর ক’বর সরানো নয়, লুই আই ক্যানের অমর এই স্থাপত্যশিল্পকে র’ক্ষা করা। তাই আম’রা মূল নকশায় ফি’রে যাবো।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানের মূল নকশা আনায় সরকার। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাফেজখানা থেকে লুই আই কানের তৈরি করা ৮৫৩টি নকশা ঢাকায় আনা হয়। পরে তার এক কপি স্থাপত্য অধিদফতরকে দেওয়া হয়।

তবে নকশা দেশে আসার পর জিয়াউর রহমানের ক’বর সরানো বা মূল নকশায় ফেরত আসার বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনও পদক্ষে’প দেখা যায়নি। অবশ্য, সংসদ কমপ্লেক্স এলাকাকে মূল নকশার আদলে ফেরত আনতে উদ্যো’গ দেখা না গেলেও সংসদ ভবনের মধ্যে নকশাবহির্ভূত যেসব রুম বা স্থাপনা করা হয়েছে তা অপসারণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

করো’না সংক্র’মণ কালে গত বছর ২৬ জুলাই সংসদ ভবনের সংস্কার বিষয়ক এক সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, লুই আই কান বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ও আশপাশের এলাকার যে নকশা করেছিলেন, সেই অনুযায়ী সংস্কার করা হবে।

সংসদকে লুই আই কানের নকশা অনুযায়ী সবকিছু সাজানোর বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স’ঙ্গে আলোচনা করে তার দিকনির্দে’শনা অনুযায়ী সংসদের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে।

সংসদ ভবন এলাকায় লুইকানের নকশার বাইরেও কিছু স্থাপনা গড়ে উঠেছে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে তখনকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নি’হত হওয়ার দুই দিন পর তার ক’বর ঢাকার চন্দ্রিমা উদ্যানে প্রতিস্থাপন করা হয়। ক্রিসেন্ট লেকে ঝুলন্ত ব্রিজ নি’র্মাণ করা হয়।

এছাড়া নকশাবহির্ভূতভাবে সংসদ কমপ্লেক্সের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ও আতাউর রহমান খান, সাবেক মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়া, মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুর, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমদ এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার তমিজউদ্দীন খানের ক’বর রয়েছে।

ক’বর ছাড়া শেরেবাংলা নগরে লুই কানের নকশাবহির্ভূত আরও কিছু স্থাপনা রয়েছে। বঙ্গব’ন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কে’ন্দ্রটি (বিআইসিসি) নকশাবহির্ভূত বলে অনেকে উল্লেখ করলেও সংসদে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এটি নকশাবহির্ভূত নয়। মূল নকশায় সংসদ কমপ্লেক্সের ওই কোনার দিকে একটি সম্মেলন কে’ন্দ্র স্থাপনের কথা বলা আছে।

সংসদ ভবনের নি’র্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৬১ সালে পাকিস্তান আমলে। স্থপতি মাযহারুল ইসলামকে সংসদ ভবনের নকশার দায়িত্ব দেওয়া হলেও তার প্রস্তাবে লুই আই কান প্রধান স্থপতি হিসেবে কাজ করেন। আর আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদ ভবনের উদ্বোধন করা হয় ১৯৮২ সালে ২৮ জানুয়ারি।

সামনে ও পেছনে বিস্তীর্ণ সবুজ খোলা মাঠসহ ২০৮ একর জমির ওপর জাতীয় সংসদ ভবন লুই কানের নকশার প্রথম ধাপ। এর চারদিকে আট লেনের সড়ক, মাঝখানে লেক। দ্বিতীয় ধাপে লেকের পর বিস্তীর্ণ সবুজ চত্বর। এছাড়া বাকি জায়গায় গড়ে তোলার কথা সচিবালয়, লাইব্রেরি, জাদুঘর, হাসপাতালসহ প্রশা’সনিক ও সাংস্কৃতিক বলয়।

জিয়াউর রহমানে খেতাব বা’তিলের সিদ্ধা’ন্ত প্রস’ঙ্গে যা বললেন

জিয়াউর রহমানের খেতাব বা’তিলে মু’ক্তিযু’দ্ধ কাউন্সিলের সিদ্ধা’ন্ত প্রস’ঙ্গে বীর মু’ক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘পদক বা’তিলের প্রসঙ্গ তো এখন আ’সছে। এদের তো পদক দেওয়াই ‍উচিত ছিল না।’

স্বাধীনতা যু’দ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকায় যে পদক দেওয়া হয়েছে তার প্রক্রিয়াটি যথাযথ ছিল না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এগুলোর জন্য জেনারেল ওসমানীই দায়ী। বঙ্গব’ন্ধু অন্ধের মতো বিশ্বা’স ক’রতেন। বঙ্গব’ন্ধু দেশে ফেরার পর সব দায়িত্ব তাকে দিলেন।

এই খেতাবগুলো দেওয়ার আগে অ’ন্তত ছয় মাস যাচাই-বাছাই দরকার ছিল। কিন্তু উনি কী করলেন, ১১ জন সেক্টর কমান্ডারকে বীর উত্তম করে দিলেন। যু’দ্ধ করুক আর না করুক। আমি একটি সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার ছিলাম। দেখেছি কার ব’ন্দুক থেকে কয়টা গু’লি বেরিয়েছে। কে বর্ডার ক্রস করে যু’দ্ধ করেছে। নান অব দেম।’

তিনি বলেন, ‘আমি জিয়াউর রহমানকে ভালো করেই চিনি। আমা’র স’ঙ্গে এক বি’ছানায় এক সপ্তাহ ছিল। তারপর তাকে সেক্টর কমান্ডার করে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। কী যু’দ্ধ করেছে না করেছে তা আমি স্বচক্ষে দেখেছি।’