রাসেলকে ১০ লাখ টাকা দিল গ্রীনলাইন

গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হা’রানো রাসেল সরকারকে ১০ লাখ টাকার চেক দিয়েছে বাসটির মালিক কর্তৃপক্ষ।সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) আ’দালতের মাধ্যমে এই টাকার চেক প্রদান করা হয়। আগামী দুই মাসের মধ্যে পরবর্তী ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হবে।

২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্ম’দ হানিফ ফ্লাইওভা’রে গ্রীনলাইন পরিবহনের ধাক্কায় প্রাইভেট’কারচালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।গ্রীনলাইন বাসের চাপায় পা হা’রানো প্রাইভেট’কারচালক রাসেল সরকারকে ৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছে পরিবহনটির কর্তৃপক্ষ। আজ বুধবার বিকেলে আ’দালতের মাধ্যমে তাকে ৫ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়।

এ সময় আ’দালত চেকটি যাচাই-বাচাই করেন। সঙ্গে সঙ্গে বাকি ৪৫ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের এক মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন হাই’কোর্ট।একই সঙ্গে সাভা’রের সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) বা অন্য কোনো হাসপাতা’লে রাসেলের কৃত্রিম পা স্থাপনসহ সব চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে বুধবার বিকেল ৩টার মধ্যে ক্ষতিপূরণের কিছু টাকা গ্রীনলাইন পরিবহন মালিককে পরিশোধ করতে বলেন হাই’কোর্ট। আ’দালত বলেন, ৩টার (বিকেল) মধ্যে রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকার কিছু অংশ না দিলে আমাদের (আ’দালত) মতো আম’রা ব্যবস্থা নেব।

হাই’কোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কাম’রুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গ্রীনলাইনের মালিক মো. আলাউদ্দিন ও তার আইনজীবীর উদ্দেশ্যে এ আদেশ দেন।

এই আদেশের পরই বিকেল ৩টায় ৫ লাখ টাকার চেক নিয়ে আ’দালতে হাজির হন গ্রীনলাইন পরিবহনের আইনজীবী মো. অজিউল্লাহ। শুনানির শুরুতেই তিনি আ’দালতকে জানান, আপাতত ৫ লাখ টাকার চেক দেওয়া হলো। এ সময় আ’দালত রাসেল সরকারকে ডেকে নিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে তার হাতে চেক তুলে দেন।

আ’দালতের আদেশ অনুযায়ী বিকেল ৩টার মধ্যে তাকে ৫ লাখ টাকার চেক বুঝিয়ে দেয় গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ।আ’দালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন খোন্দকার শামসুল হক রেজা ও আইনজীবী উম্মে কুলসুম স্মৃ’তি। অন্যদিকে গ্রীনলাইন পরিবহনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. অজিউল্লাহ।

এরপর আ’দালত গ্রীনলাইন পরিবহনের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, বাকি ৪৫ লাখ টাকা কবে দেবেন? জবাবে অজিউল্লাহ বলেন, এক মাস সময় চেয়েছি। এরপর আ’দালত এক মাসের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে এ সময়ের মধ্যে বাকি টাকা দিতে নির্দেশ দেন। এর বাইরে রাসেলের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

রাসেল সরকারের আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা জানিয়েছেন, গাড়ির কোম্পানির পক্ষ থেকে তাদের এতো বেশি পরিমাণ অর্থ দিতে সমস্যার কথা মৌখিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আ’দালতের আদেশ বহাল রয়েছে।

আ’দালতে গ্রীনলাইনের মালিক মোহাম্ম’দ আলাউদ্দিন ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ কমিয়ে আনার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য আ’দালতের প্রতি আবেদন করেন। গ্রীনলাইনের আইনজীবী মোহাম্ম’দ ওয়াজিউল্লাহ বলেন, তার অনেকগুলো আবেদন ছিল। তিনি বলেছেন গত তিন বছর তার ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। তিন মাস আগে সাড়ে তিন কোটি টাকা লোকসান দিয়েছেন। প্রতিটা গাড়ির সঙ্গে ব্যাংক লোন আছে। তাই তিনি বলেছেন যদি বিবেচনা না করেন তাহলে পরিশোধ করতে না পারলে ব্যবসা বন্ধ করে দেবেন।

সকালে শুনানির শুরুতে রিট’কারী আইনজীবী উম্মে কুলসুম স্মৃ’তি বলেন, ‘আমাদের সাথে এখনও গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেনি।’ এ সময় গ্রীনলাইনের আইনজীবী মো. অজিউল্লাহ ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধের জন্য আবারও সময় চান।

তখন আ’দালত গ্রীনলাইনের মালিক ও আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, প্রাইভেট’কার চালক রাসেল সরকার পা হারিয়ে হাসপাতা’লে ভর্তি হলেন, আপনারা কোনো খোঁজ নিলেন না। একটা টাকাও দিলেন না। রাসেলের একটা পা কে’টে ফেলা হয়েছে। আরেকটি পা-ও যাওয়ার পথে। আপনাদের ব্যবসা তো ঠিকই চলছে। মানবতারও তো একটা ব্যাপার আছে। এ সময় গ্রীনলাইনের আইনজীবী মো. অজিউল্লাহ আ’দালতকে বলেন, রাসেল সরকারের চাকরির ব্যবস্থা করবেন গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ।