মুসলিম বিশ্বের কাছে এথেন্স ছিল এমন একটি কলঙ্কিত শহর যেখানে কোনো মসজিদ ছিল না। গ্রীসে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথম কোনো মসজিদের যাত্রা শুরু হওয়ার পর আজ প্রথমবারের মত মসজিদটিতে জুমআ’র নামাজ আদায় হল। অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের দুইশ বছর পর দেশটিতে মুসলিমদের স্থায়ী উপাসনালয় স্থাপিত হল যা রাষ্ট্রীয়ভাবে তৈরি হয়েছে। মসজিদটিতে জুমআ আদায়ের মধ্য দিয়ে একটি নতুন ইতিহাসের যাত্রা শুরু হল। এথেন্স ছিল ইউরোপের একমাত্র মসজিদহীন শহর । এখানে মুসলিমদের নামাজের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও প্রস্তুত করা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক জায়গায় এ দেশের মুসলিমরা নামাজ আদায় করত। গ্রীসের রাজনীতিতে একগুচ্ছ মৌলিক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এমন উদার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দেশটির ধর্ম বিষয়ক সচিব জর্জিয়াস ক্যালানন্টিস জানান, ২০০৬ সাল থেকে সরকাগুলোর ধারাবাহিক প্রচেষ্টার ফলাফল আজকের এই পরিবর্তন। দেশটিতে ‘৩৫১২-আইন’ পাসের মধ্য দিয়ে গ্রিস নিজ দেশ ও বহির্বিশ্বে গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও পারষ্পারিক সম্মানের একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। তবে ৩৫০ জন ধারণ ক্ষমতার মসজিদটিতে কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে নামাজে লোক সমাগম কম রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। মুসলিমদের জন্য উপাসনালয় প্রতিষ্ঠায় সরকারের বিভিন্ন মহল ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা ও লবিংয়ের কাজটি করেছেন এথেন্সের মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের নেতা নাইম এল ঘান্দোর। তিনি এখন বেশ উচ্ছ্বাসিত। মসজিদের যাত্রা শুরুর বিষয়ে তিনি বলেন, আমার সন্তান গ্রীক ছেলেমেয়েদের সঙ্গে স্কুলে যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় এবং বসবাস করে। কিন্তু তারা যখন প্রার্থনা করতে যেত তখন একজন গির্জায় যেত অথচ মুসলিম সন্তানরা ভূগর্ভস্থ গ্যারেজে যেত। এই চিত্র একজন মুসলিম শিশুর মনে এটাই মনে করিয়ে দিয়েছে যে, তারা তাদের সমমর্যাদার গ্রীক নাগরিক নন। মসজিদের প্রথম ইমাম হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মরক্কো বংশোদ্ভূত ৪৯ বছর বয়সী গ্রীক নাগরিক জাকি মাহমুদ। মসজিদটির এমন এক সময়ে যাত্রা শুরু করল যখন কভিড-১৯ পরিস্থিতি ও অভ্যন্তরীণ কারণে অর্থনীতিতে বাজে অবস্থা বিরাজ করছিল। এর আগে দেশটির বামপন্থী শিরিজা পার্টির সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী কস্তাস গ্যাভ্রোগলু ২০১৯ সালে ৭ জুন মসজিদ খুলে দেওয়ার একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু পরে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর দেশটির পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকার কর্তৃক এর যাত্রা শুরু হল।