সুন্দরবনের সাগরপাড়ে শুরু হচ্ছে শুটকি মৌসুম

স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলেদের সাগর ও দুবলার চরে যাওয়ার অনুমিত দিয়েছে বনবিভাগ। পাস পারমিট নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকেই সাগরে যাওয়া শুরু করেছেন জেলেরা। বঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে আবার শুরু হবে মাছ আহরণ ও শুটকি প্রক্রিয়াকরণ।

প্রতি বছর শীত মৌসুমের আগ মুহূর্তেই শুরু হয় দুবলার চরে শুটকি মৌসুম। এবার চলতি বছরের নভেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত চলবে এ মৌসুম।

মৌসুম ঘিরে উপকূলের কয়েক হাজার জেলে জড়ো হন দুবলার চরে। মাছ ধরার জন্য নৌকা ও জাল নিয়ে তারা যান সমুদ্রে। চরে থাকাসহ মাছ শুকানো ও রাখার জন্য অস্থায়ী বসত গড়ে তোলেন জেলেরা।

সুন্দরবনে সকল ধরনের গাছ কাটা নিষিদ্ধ করায় জেলেরা সঙ্গে করে নিয়ে যান ঘর তোলার বাঁশ, কাঠসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। চরে ৫ মাস ধরে তারা মাছ আহরণ ও শুটকি তৈরির কাজ করেন।

তবে জেলেদের অভিযোগ, এবার আর দুস্যতার ভয় নেই। কিন্তু পথে ঘাটে দস্যুদের চেয়েও বেশি অত্যাচার নিযার্তন করেন বনবিভাগের কতিপয় সদস্যরা। তাই এ থেকে পরিত্রাণের জন্য তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপও কামনা করেন তিনি।

মোংলার চাঁদপাই গ্রামের এক জেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা নদী পথে যাওয়ার সময় ফরেস্টার ঝামেলা করে বেশি। এরা ডাকাতের চেয়েও বেশি খারাপ। ডাকাত ২০ হাজার নিয়ে ছাড়ে। কিন্তু ওরা (ফরেস্টার) ৪০-৫০ হাজার না হলে ছাড়ে না। এখন সমস্যা ফরেস্টাররাই বেশি করছে।’

আসছে শীত মৌসুমের পুরাটাই জেলেদের সাগর ও সুন্দরবনে থাকতে হবে। তাই করোনার প্রকোপ বাড়লে তাদের পড়তে হবে চরম বিপদে। এমন পরিস্থিতিতে চরে হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জেলেদের।

জেলেদের এ দাবির বিষয়ে ‘সেভ দ্যা সুন্দরবন’ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই দুবলার চরের ২৫ থেকে ৩০ হাজার জেলে মাছ আহরণ ও শুটকি তৈরির কাজ করতে জড়ো হবে।

সেখানে যেহেতু অনেক লোকের সমাগম ঘটবে তাই তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে ভাসমান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন জরুরি। তা না হলে ওখানে যেকোনো একজন কোনোভাবে সংক্রমিত হলে তা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মাঝে ছড়িয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, শীতে করোনার প্রকোপ বাড়বে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ বেশ কিছু শর্তে জেলেদের সাগরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

তবে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে সেখানে কোনো হাসপাতাল স্থাপন করা হবে কিনা তার জবাব মেলেনি বনবিভাগের পক্ষ থেকে।

গত মৌসুমে দুবলার চর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আর এবার টার্গেট ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। আবহাওয়ার উপর নির্ভর করবে রাজস্বের পরিমাণ।