ইস্পাহানি গ্রুপের দেড় কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি, মা’মলা

চট্টগ্রামের ইস্পাহানি গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৮ কোটি ২৭ লাখ টাকার গোপন বিক্রির তথ্য উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর। ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য জানান। প্রতিষ্ঠান চারটি হলো- ইস্পাহানি মোড়ের লালখান বাজারের দি এভিনিউ হোটেল অ্যান্ড স্যুটস, পিটস্টপ সুইটস অ্যান্ড বেকারি, পিটস্টপ শো-রুম এবং পিটস্টপ সুপার স্টোর।

ভ্যাট গোয়েন্দার অনুসন্ধানে এই চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ১৮ কোটি ২৭ লাখ টাকার গোপন বিক্রির তথ্য উদঘাটন

করা হয়। এর মাধ্যমে ইস্পাহানি গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠান সুদসহ প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

মইনুল খান জানান, ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৭ সেপ্টেম্বর ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান চালায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক তানভীর আহমেদ ও সহকারী পরিচালক মো. মহিউদ্দীন।

ভ্যাট গোয়েন্দার অনুসন্ধানে, দি এভিনিউ হোটেল অ্যান্ড স্যুটস ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দাখিলপত্রে বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে ৮৭ লাখ ৭২ হাজার ১৪৬ টাকা। কিন্তু জব্দ কম্পিউটার থেকে প্রকৃত বিক্রয়মূল্য পাওয়া যায় ১ কোটি ২৯

লাখ ৯৩ হাজার ৮১৪ টাকা। এক্ষেত্রে ৪২ লাখ ২১ হাজার ৬৬৮ টাকার বিক্রয় তথ্য গোপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ৬ লাখ ৩৩ হাজার ২৫০ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৫৬৯ টাকা সুদ প্রযোজ্য।

পিটস্টপ সুইটস অ্যান্ড বেকারি ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দাখিলপত্রে বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে ১২ কোটি ৫৪ লাখ ৬৯ হাজার ৯৪৬ টাকা। কিন্তু জব্দ কম্পিউটার থেকে বিক্রয়মূল্য পাওয়া যায় ১২ কোটি ৯৭ লাখ ২৩ হাজার ৩০৭ টাকা। এক্ষেত্রে ৪২ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬১ টাকার বিক্রয় তথ্য গোপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ৬ লাখ ৩৮ হাজার ০০৪ টাকা

ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ৭ লাখ ২১ হাজার ১২৬ টাকা প্রযোজ্য।

অন্যদিকে, পিটস্টপ শো-রুম নামীয় প্রতিষ্ঠানটি ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দাখিলপত্রে বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে ৬ কোটি ৭ লাখ ৬ হাজার ২৫৯ টাকা। জব্দ কম্পিউটার থেকে প্রকৃত বিক্রয়মূল্য পাওয়া যায় ১৬ কোটি ৪৫ লাখ ২৪ হাজার ৫১৫ টাকা। এতে দেখা যায়, ১০ কোটি ৩৮ লাখ ১৮ হাজার ২৫৬ টাকার বিক্রয় তথ্য গোপনের মাধ্যমে

প্রতিষ্ঠানটি ৪৪ লাখ ৩২ হাজার ৪২১ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। একইভাবে এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে ৪১ লাখ ৭১ হাজার ৯১৪ টাকা সুদ আদায়যোগ্য।

পিটস্টপ সুপার স্টোর ১৮ জানুয়ারি থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে দাখিলপত্রে বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে ১ কোটি ৮১ লাখ ৯৬ হাজার ১৪৫ টাকা। কিন্তু জব্দ কম্পিউটার থেকে প্রকৃত বিক্রয়মূল্য পাওয়া যায় ৮ কোটি ৮৫ লাখ ৭৪ হাজার

২৩৮ টাকা। এক্ষেত্রে ৭ কোটি ৩ লাখ ৭৮ হজার ৯৩ টাকার বিক্রয় তথ্য গোপনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ১০১ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ৬ লাখ ১৪ হাজার ৭৯ টাকা আদায়যোগ্য হবে।

অনুসন্ধানে ইস্পাহানি গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠান মোট ৮৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭৭৬ টাকা ভ্যাট পরিহার করেছে। এই ভ্যাটের ওপর সুদ বাবদ ৬০ লাখ ৬ হাজার ৬৮৮ টাকা প্রযোজ্য হবে। ভ্যাট আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা করা হয়েছে, যা ন্যায় নির্ণয়নের জন্য চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হবে।