অতিরিক্ত ওজন অকাল মৃত্যু ঘটায়!

যাদের ওজন বেশি তাদের মৃত্যু ঝুঁকিও বেশি। ওজন বেশি হলে ব্রেস্ট, ওভারী, কিডনি, প্যানক্রিয়াস, কোলন, রেকটাম এবং বোনে ম্যারোতে ম্যালিগনেন্সি হয়। সম্প্রতি এক গবেষণায় এই তথ্য জানা গেছে।

অত্যাধিক মাত্রায় ক্যালোরি যুক্ত খাবার খাওয়া এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাবকে বাড়তি মেদ বা অতিরিক্ত ওজনের মূল কারণ হিসাবে ধরা হয়। তা ছাড়া আরও বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যেমন সেডেন্টারি বা শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন, অনিয়মিত খাদ্যাভাস, শরীরচর্চার অভাব, চিপস, পিৎজা, বার্গার, কোল্ডড্রিঙ্কস আইসক্রিমের মতো ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুডের প্রতি ঝোঁক, এবং কিছু ক্ষেত্রে হরমোনের সমস্যা হলে মেদ বৃদ্ধি পায়।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন থেকে জানা যায়, সারা পৃথিবীতে ১.৯ বিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ওবেসিটিতে ভুগছেন। প্রতি ১০ জনে ৪ জন মানুষের ওজন যা থাকা উচিৎ তার চাইতে বেশি, আর দশজনে একজন ওবিস। এই সমস্যাটির কারণে বাড়ে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা এবং অস্থিসন্ধির বিভিন্ন রোগ। আর ক্যান্সারের ঝুঁকি তো আছেই।

সাম্প্রতিক এই গবেষণার জন্য ২০৪ টি বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে। এসব গবেষণায় ওবেসিটি, ওজন বাড়া, কোমরের মাপের সাথে ৩৬টি ক্যানসারের যোগসূত্র বিবেচনা করা হয়।

অতিরিক্ত ওজন নিয়ে আগেই সাবধান করেছে ব্রিটেন। তেল-ঝাল-মশলাদার খাবারে রীতিমতো আইন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তারা। এ বার একই কথা শোনা গেল মার্কিন বিজ্ঞানীদের মুখেও। তারা বলছেন, করোনা-সংক্রমণ বা তাতে জটিলতার আশঙ্কা বিচার করলে, অতিরিক্ত ওজন অনেকটা ‘আগুনে ঘি ফেলার মতো’।

দক্ষিণ ক্যালিফর্নিয়ার ‘কাইজ়ার পারমানেন্টে’-এ গবেষণারত সারা টারটফ এই রিসার্চ-দলের অন্যতম সদস্য। তিনি জানিয়েছেন, ৫২০০ জন করোনা-রোগীকে নিয়ে সমীক্ষা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ স্থূলকায় চেহারার। সারা জানান, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কো-মর্বিডিটি থাকুক বা না-থাকুক, অন্য সব জটিলতার তুলনায় অতিরিক্ত ওজনে রোগীর আইসিইউ-এ ভর্তির প্রবণতা বাড়ছে। গবেষকদের মতে, বাড়তি মেদের দাম দিতে হচ্ছে আমেরিকা-সহ বেশ কিছু দেশকে।

গত কয়েক দশকে মার্কিন বাসিন্দাদের মধ্যে ওজন-বৃদ্ধির হার চোখে পড়ার মতো। এই মুহূর্তে দেশের ৪২ শতাংশ মানুষ অতিরিক্ত ওজনের শিকার। গবেষকরা জানাচ্ছেন, কৃষ্ণাঙ্গ ও স্পেনীয় বংশোদ্ভূতদের মধ্যেও স্থূলকায় চেহারার প্রবণতা বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শরীরে বাড়তি মেদ থাকলে করোনার বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতা কমে যায়। ফুসফুস সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ ও বর্জনের সময়ে ফুসফুসের বাড়া-কমা বাধা পায়। মধুমেহ বা হৃদ্‌রোগ না থাকলেও বিপদটা একই রকম, জানাচ্ছেন তারা।

এই গবেষণায় যুক্ত রয়েছেন ফরাসি বিজ্ঞানী ফ্রাঁসোয়া প্যাটিউ-ও। তিনি জানান, শরীরের অতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সরাসরি কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কি ফ্যাট-জাতীয় কোষ এই ভাইরাসের বাসা বাঁধার জন্য আদর্শ? পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে তা-ও। এ দিকে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সোমবার থেকে প্রকাশ্যে ছ’জনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ হচ্ছে ইংল্যান্ডে।

অতিরিক্ত ওজন থেকে বাঁচার প্রধান পথ হল জীবনযাপনের পরিবর্তন। খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা, যাকে বলা হয় ডায়েটিং এবং শারীরিক পরিশ্রম। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, নিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়ার ফলে হয়তো ওজন কমল, তবে তা সাময়িক। একে ধরে রাখতে গেলে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও যোগব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে।