নারী-পুরুষের মধ্যে অনেকেই প্রস্রাবের সংক্রমণে ভোগেন। আমরা অনেকেই আছি যারা প্রস্রাবের বেগ চাপলে আটকে রাখি। তবে আমরা ও জানি যে এই অভ্যাস আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তা সত্ত্বেও আমরা প্রতিনিয়ত করে থাকি। তবে আপনি যদি নিয়মিত এ অভ্যাস চালিয়ে যান তবে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি অপেক্ষা করছে আপনার জন্যে। চলুন তা জেনে নেওয়া যাক।
জ্বর
দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলে প্রস্রাবে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া শরীর থেকে বের হতে পারে না। এর ফলশ্রুতিতে জ্বর আসতে পারে।
প্রস্রাবের সময় ব্যথা করা
দীর্ঘসময় ধরে প্রস্রাব আটকে রাখার ফলে প্রস্রাবের সময় তীব্র ব্যথা হতে পারে।
কিডনিতে পাথর
পানি কিডনিকে পরিষ্কার করে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখার ফলে কিডনির উপর মারাত্মক প্রভাব পরে। এর ফলে কিডনিতে পাথর হতে পারে।
তলপেটে ব্যথা
দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলে তলপেটে তীব্র থেকে মাঝারি ধরণের ব্যথা হয়।
মূত্রাশয় ফুলে যাওয়া এবং ক্যানসার
আপনি যখন পানি পান করেন তখন মূত্রাশয় আস্তে আস্তে পরিপূর্ণ হতে থাকে। তাই যখন এই পানি মূত্র হিসেবে শরীর থেকে বের হয়ে না যায় তখন মূত্রথলি ফুলে যায়। এর চিকিত্সা করা না হলে মূত্রাশয় ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে
সাধারণত একজন নারীর জীবদ্দশায় প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকি ৫০ শতাংশেরও বেশি। কিন্তু শিশু ও বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার কম নয়। কিছু সচেতনতা ও সতর্কতা এই সংক্রমণ থেকে আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে।
কিডনিতে মানবদেহে প্রস্রাব তৈরি হয়। সেখান থেকে এটি জমা হয় মূত্রাশয় বা মূত্রস্থলীতে। সেখান থেকে একটি সরু নালী – মূত্রনালী দিয়ে দেহ থেকে বার হয়। মূত্রস্থলী থেকে বেরোবার মুখে মূত্রনালীর চারিদিক পেশী দিয়ে ঘেরা থাকে (অনেকটা আংটির আকারে)। পুরুষদের ক্ষেত্রে মূত্রনালী প্রস্টেটের মধ্যে দিয়েও যায়। মূত্রস্থলী যখন প্রস্রাবে পূর্ণ হয়ে যায়, তখন যতক্ষণ না পর্যন্ত নার্ভের মারফতে সংকেত আসে যে ততক্ষণ ঘিরে থাকা পেশী শক্ত হয়ে মূত্রনালীর ফুটো চেপে বন্ধ করে রাখে এবং মূত্রস্থলী ঢিলে বা শিথিল অবস্থায় থাকে।
মূত্রস্থলী প্রস্রাব-পূর্ণ হলেও সেটি বাইরে বেরিয়ে আসে না। প্রস্রাব সুরু হবার সময়ে মূত্রস্থলী নার্ভের সংকেতে সংকুচিত হতে সুরু করে এবং মূত্রনালীকে ঘিরে থাকা পেশী শিথিল হয় – ফলে মূত্র বেরিয়ে এসে মূত্রস্থলী শূন্য হয়। প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণের অসুবিধা তখনই হয়, যখন হঠাৎ মূত্রস্থলী সংকুচিত হতে সুরু করে অথবা যখন সংকুচিত হওয়া উচিত তখন না হয়ে অত্যাধিক প্রস্রাবে পরিপূর্ণ হয়ে যায়, যার প্রবল চাপে অনিচ্ছাসত্বেও মূত্র বেরিয়ে আসে। এছাড়া মূত্রনালীকে ঘিরে থাকা পেশী ঠিকমতো তার কাজ না করলেও এই সমস্যা হতে পারে।
প্রস্রাব ধারনের অক্ষমতা এটা হতে পারে দেহের মূত্রনালি, মূত্রথলির ইত্যাদি অস্বাভাবিকতার কারণে কিংবা শারীরিক চাপ, ইনফেকশন, স্নায়ুযন্ত্রের রোগের কারণে অথবা মূত্রথলির সম্প্রসারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায়, মূত্রথলি বেশি বিস্তৃত হওয়ার ফলে প্রস্রাব ঝরতে পারে। তাছাড়া মহিলাদের জরায়ু নিচে নেমে যাওয়া, কিংবা পুরুষদের প্রস্টেটগ্রন্থি অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে গেলে, দেহের বস্তি দেশ বা পেলিভিসে টিউমার কিংবা ইনফেকশন হলেও এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যেহেতু সমস্যাটা বেশ কিছু ভিন্ন ভিন্ন কারনে হয়ে থাকে। প্রথমে বের করতে হবে, কেন এই সমস্যাটা হচ্ছে। তার জন্য মূত্রপরীক্ষা, পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্টেট পরীক্ষা ও অন্যান্য আরও কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই ওষুধ, ব্যায়াম, কিংবা সার্জারি করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তাই এই সমস্যা নিয়ে বসে থাকা উচিৎ নয়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
পরামর্শ
চা, কফি, কোমল পানীয়, অ্যালকোহল সমস্যা বাড়াবে। বিশেষ করে বাড়ির বাইরে এসব এড়িয়ে চলাই ভালো। প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে বাথরুমে গিয়ে মূত্রথলি খালি করুন। অনেকক্ষণ প্রস্রাব জমিয়ে রাখবেন না। মনে রাখবেন, প্রস্টেটের সমস্যায় হঠাৎ করে এ থেকে প্রস্রাব আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।
ওজন কমান। অতিরিক্ত ওজন সমস্যা জটিল করে তুলবে। ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করুন। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ডায়াবেটিসজনিত স্নায়ুবৈকল্য এই সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে।
পুরুষদের যে প্রস্রাবে সংক্রমণ হয় না, তা নয়। প্রস্রাবের নিয়ন্ত্রণহীনতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া, জ্বালাপোড়া, তলপেটে অস্বস্তি হলে প্রস্রাব কালচার করা উচিত। বেশি করে পানি পান করলে প্রস্রাবে সংক্রমণ এড়ানো যায়—কথাটা সব সময় ঠিক নয়। তবে প্রস্রাব আটকে রাখলে বা প্রস্রাব একবারে সম্পূর্ণ না হলে বা মূত্রাশয়ে জমে থাকলে তাতে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।
রক্তে শর্করার আধিক্য প্রস্রাব সংক্রমণের একটি বড় কারণ। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা সাবধান! শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ব্যথা করা মানেই সংক্রমণ নয়। অন্যান্য কারণেও এ রকম জ্বালা বা ব্যথা হতে পারে। তাই আন্দাজে দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়া উচিত নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
কোনো সংক্রমণ থাকলে তা ঢাকা পড়ে যাবে, আবার অকারণে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে পারে। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বোধ, টয়লেট ব্যবহারে সচেতনতা, বাড়ির বাইরে টয়লেট ব্যবহারে সংকোচ পরিহার ইত্যাদি অভ্যাস প্রস্রাবে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে সাহায্য করে। তারপরও বারবার সংক্রমণ হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।