ঘরোয়া চিকিৎসায় যেভাবে করোনা জয় করলেন এক পরিবারের ১৮ জন

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে ভর্তি না হয়েও সুস্থ হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের একই পরিবারের সেই ১৮ জন। গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দফায় নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ওই ১৮ জনের করোনা নেগেটিভ আসে।

জানা গেছে, গত ২১ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শিল্পী আক্তারের ছোট ভাই ওই পরিাবরের প্রথম সদস্য হিসেবে করোনায় আক্রান্ত হন। যৌথ পরিবার হওয়ায় পরে বাকিদেরও নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর দুইদিন পর পরিবারের আরও ১৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ৭৪ বছর বয়সের বৃদ্ধ ও ১৪ বছরের কিশোরও রয়েছে।

এদিকে তাদের করোনা রিপোর্ট আসার পর বাড়িতে রেখে পরিবারের সবাইকে চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তুতি নেন ডা. শিল্পী আক্তার। করোনা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাধে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে তার জানা ছিল। একইসঙ্গে চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ প্রস্তুত রাখেন। এমনকি সর্বোচ্চ খারাপ অবস্থার জন্যও প্রস্তুতি নেন এই নারী চিকিৎসক।

পরিবারের ১৮ সদস্যের করোনা মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে ডা. শিল্পী আক্তার আমাদের সময়কে বলেন, ‘করোনা শনাক্ত হওয়ার পরই সবাইকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়ার কথা ভাবি। কেননা পরিবারের ১৮ জনকে একই হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভব নয়। একাধিক হাসপাতালে ভর্তি করলে দেখাশোনা করা সম্ভব ছিল না, যা করার ছিল সব আমাকেই করতে হতো। তাই বাসায় রাখার সিদ্ধান্ত নেই। এ ছাড়া বাসায় আলাদা আইসোলেশনে রাখার মতো পর্যাপ্ত কক্ষ ছিল। পরে সময় ব্যয় না করে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তবে কারও শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেনি, যা আমাদের সৌভাগ্য।’

এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমার বাবার বয়স ৭৪ বছর। তিনি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন। কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার পর তার জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট কিছুই ছিল না। পরিবারের এক সদস্যের জন্য শুধু একবার নেবুলাইজার ব্যবহার করতে হয়েছে।’

শিল্পী বলেন, ‘সবাই চিকিৎসকদের দেওয়া ওষুধ নিয়মিত খেয়েছেন। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেয়েছেন। কিছু ব্যায়াম, গরম পানি পান করা, গড়গড়া করার মতো সব স্বাস্থ্যবিধিই পালন করা হয়েছে।’

পরিবারের সবার সুস্থ হয়ে ওঠার পেছনে দৃঢ় মনোবল ও একে অপরের প্রতি সহযোগিতা ছিল এমন মন্তব্য করে শিল্পী আক্তার বলেন, ‘করোনা পজিটিভ আসার পর সবাই ভয় পেয়ে যাই। তার ওপর এলাকাবাসীর অমানবিক আচরণ আরও মনোবল ভেঙে দেয়। তবে প্রশাসনিক সহযোগিতা ও উৎসাহ আমাদের মনোবল তৈরি করে। এরপর আসে আইসোলেশনের দিনগুলো। তখন আক্রান্তদের কাছে কেউ ছিল না। আমি বাইর থেকে সার্বিক সহযোগিতা করলেও কাছে ছিলাম না। সবকিছু তারাই করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের যখন যা প্রয়োজন ছিল বাড়ির সামনে দিয়ে আসা হতো। কিন্তু রান্না-বান্নাসহ বাড়ির সব বিষয় তাদের দেখতে হয়েছে। ফলে বাড়ির একজন অসুস্থবোধ করলে আরেকজন কাজ সামলে নিয়েছেন। আর সদস্য বেশি হওয়ায় তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তাদের দুঢ় মনোবল ও একে অপরের পাশে ছিলেন বলেই আজ তারা সুস্থ।’