এলিয়েন বলতে আমরা এক বাক্যে যা জানি তা হলো, ‘ভিনগ্রহের প্রাণী’। অর্থাৎ পৃথিবীর বাইরের ভিন্ন মহাকাশের কোনো স্থানের প্রাণকে বোঝায়। প্রাণী বলতেই বোঝায় যাদের প্রাণ আছে। সে হিসেবে ভিনগ্রহের একটি সূক্ষ্ম ব্যাকটেরিয়াও ভিনগ্রহের প্রাণী। তবে ব্যাকটেরিয়াকে কিন্তু এলিয়েন বলা বা বিবেচনা করা হয় না। তাহলে দেখা যাচ্ছে এলিয়েনের সজ্ঞা পুরোপুরি পরিস্কার নয়।
তবে এই বিষয়টিও একইসাথে স্বীকার করতে হবে যে, পৃথিবী ছাড়াও আরও যে অন্য গ্রহগুলো রয়েছে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে। সেখানে থাকতে পারে বসবাসের পরিবেশ। কেননা এখনো মহাকাশের অনেক গ্রহ আমাদের কাছে অজানা। হয়তোবা সেই অজানা গ্রহেই বাস করে এই এলিয়েন– এরকমই বিশ্বাস করে বেশিরভাগ মানুষের।
ইসলাম কী বলে? : পৃথিবী ব্যাতিত আর কোন গ্রহে এখন পর্যন্ত কোন প্রানের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়নি। ভিন গ্রহে প্রানের সন্ধানে পৃথিবীর বাঘা বাঘা সব বিজ্ঞানী মহাকাশ জুড়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। পৃথিবীর বাইরে অনেক গ্রহই আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু সেখানকার প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ এসব গ্রহগুলো আমাদের পৃথিবীর খুব কাছে অবস্থিত নয়। যার কারনে এত দূর থেকে আলোর মাধ্যমে এদের বৈশিষ্ট্য বোঝা কঠিন।
আমাদের বর্তমান প্রযুক্তি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে অতি শীঘ্রই যে আমরা এসব জানতে পারব তাতে কোনই সন্দেহ নেই। আসুন এবার দেখি পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে কী বলা হয়েছে।
আল্লাজ মহান ইরশাদ করেন, তার ইঙ্গিত সমূহের একটি–নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি এবং এদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া জীব। তিনি যখন ইচ্ছা এদেরকে একত্র করতে সক্ষম। [আস শুরা : ২৯] তিনি আল্লাহ যিনি সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং সমসংখ্যক (৭টি) পৃথিবীও সৃষ্টি করেছেন। [তালাক্ব : ১২] সুবহানআল্লাহ !! এই আয়াত দুটি থেকে কি বোঝা যায়? পৃথিবীতে জীবন ধারনের জন্য যেমন পরিবেশ রয়েছে, এমন পরিবেশ বিশিষ্ট আরও অন্তত ৬টি গ্রহ এই মহাকাশে আছে।
যেখানে তিনি প্রাণ ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি চাইলেই এদের সবাইকেই একত্র করতে সক্ষম। যাই হোক, পবিত্র কোরআনের আলোকে এটা স্পষ্ট হলো যে, এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণী নিশ্চয়ই আছে। গবেষণা বা অনুসন্ধানের মাধ্যমে যা একদিন আবিষ্কৃত হবেই।
এত নিদর্শন থাকার পরও যারা ইসলামকে উপলব্ধি করতে পারছে না, তাদের চেয়ে বড় দুর্ভাগা আর কে আছে? পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে আরো আলোচনা এসেছে।
আল্লাহ মহান আরো ইরশাদ করেন, তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীসমূহ এবং উহাদিগের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুর প্রতিপালক যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাসী হও। [২৬:২৩-২৪] তার এক নিদর্শন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃষ্টি এবং এতদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীব-জন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন। [৪২ : ২৯] আল্লাহ তিনি, যিনি সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য আকাশ আর অনুরূপ সংখ্যক পৃথিবী।
উহাদের উপরও আল্লাহর নির্দেশ অবতীর্ণ হয়; (এ তথ্যটি) এই জন্য যে তোমরা যেন অবগত হও, আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও সর্বাজ্ঞ। [৬৫ : ১২] আল-কুরআনের আরো অনেক আয়াতে ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে যে- শুধু আমাদের এই পৃথিবীই নয়, অন্য কোন অজানা প্রান্তেও রয়েছে আল্লাহর সৃষ্টি জীব। কিন্তু এর বিপরীতে মহাবিশ্বের কোথাও প্রাণ নেই এরকম কোন বার্তা আল-কুরআনের কোথাও পাওযা যায় না।
আর ৪২ নং সূরার ২৯ নং আয়াত এবং ৬৫ নং সূরার ১২ নং আয়াত ২টি আমাদেরকে ১০০% নিশ্চিয়তা প্রদান করে যে, ভিন গ্রহের প্রাণী রয়েছে এবং শেষ আয়াতটি আমাদেরকে এও ধারনা প্রদান করে যে, ভিন গ্রহের প্রাণীরা আমাদের মতই বুদ্ধিমান এবং গঠন গত দিক থেকে আমাদের মতই (হতে পারে আমাদের থকেও বেশি) উন্নত।
সুতরাং ইসলামের আলোকে আমরা একথা বলতে পারি যে ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে, হোক তার নাম এলিয়েন বা অন্য কিছু!