কয়েক একটি ছিমিয়ে থেকে ফের প্রতিদিন আক্রান্তের রেকর্ড ছাড়িয়ে আছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার আর মৃত্যুর সংখ্যাও যে বাড়তে থাকবে এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মনে কোন সন্দেহ নেই। এখন যেভাবে আবারও আক্রান্তের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে তাতে প্রশ্ন হলো সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে শেষ পর্যন্ত কোথায় দাঁড়াবে? এবং কোন পর্যায়ে এসে এই হার কমতে শুরু করবে?
এসম্পর্কিত একটি মডেল সরকারেরর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট-আইইডিসিআর’র হাতে রয়েছে। কিন্তু জনমনে আতঙ্ক ছড়াতে পারে সেই বিবেচনায় এই মডেলটি সরকার বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে আনতে চাইছে না। বিষয়টি নিয়ে ভাইরোলজিস্ট ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এক দিক থেকে ঠিক কাজটিই করা হয়েছে। কারণ এই মুহূর্তে প্রজেকশন (পূর্বাভাস) করার মতো যথেষ্ট ডেটা (উপাত্ত) পাওয়া যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস রোগীদের কাছ থেকে নমুনা-রস সংগ্রহের কাজে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। একদিন নমুনা সংগ্রহ করে আরেকদিন তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেই তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে অন্য এক দিন। ফলে এর থেকে এখনই কোন সুনির্দিষ্ট মডেল তৈরি করা কঠিন।’
তবে বাংলাদেশের জন্য নেতিবাচক দিক হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার যে সব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা দেশের জনগণ মানছে না। তারা তাদের ইচ্ছেমতো চলাফেরা করছে। বলা হচ্ছে, ঘরে থাকতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। মানা হচ্ছে না তাও।
দেশের সাধারণ মানুষের মনোভাব এমন যে, বিশ্বে বা দেশে কিছুই হয়নি। এই ধরনের মানসিকতায় ও খামখেয়ালিপনায় যে বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনছে সে দিকে তাদের ভ্রম্নক্ষেপ নেই। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার মাইকিং করে বলা হচ্ছে ঘরে থাকার জন্য, পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য। কে শোনে কার কথা। নির্দেশ অমান্য করে যারা বিনা কারণে ঘুরাফেরা করছে, তাদের জরিমানাও করা হচ্ছে। তারপরেও মানুষ সচেতন কিংবা সাবধান হচ্ছে না।
বাংলাদেশ নিয়ে জাতিসংঘের একটি রিপোর্ট ভাঁস হয়ে যায়। গত ২৬ মার্চ জাতিসংঘের একটি ইন্টার-ডিপার্টমেন্টাল রিপোর্টের পূর্বাভাস বলা হয়, বাংলাদেশে জনঘনত্বের বিবেচনায় করোনা ভাইরাসে পাঁচ লাখ থেকে ২০ লাখ মানুষের জীবনহানি ঘটতে পারে।
প্রায় দুই মাস ধরে চলছে দেশে করোনা পরিস্থিতি। জাতিসংঘের পূর্বাভাসের পরিস্থিতি এখনও আভাস মিলছে না। বাংলাদেশে এখনও সংক্রমণ মাঝারি পর্যায়ে রয়েছে।
দেশের করোনা পরিস্থিতির স্বাভাবিক না হলেও গার্মেন্টস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে শত শত কারাখানা খুলে দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)।
সংস্থাটি বলছে, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা না করে শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে আনা হলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় দফা ঢেউ আসতে পারে।
আক্রান্তের দিকে দিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ৬ নম্বরে রয়েছে। তবে সুস্থ হয়ে ওঠার হার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম বাংলাদেশে। বিশ্বে মোট আক্রান্তের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩০ দশমিক ৩২ শতাংশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনা ভাইরাসের রোগীর সংখ্যা। টেস্টের পরিমাণ যতোই বাড়ছে ততই আক্রান্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে এখনও নমুনা দেয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে।
বিভিন্ন হাসপাতালে নমুনা দিতে ইচ্ছুক মানুষের প্রচণ্ড ভিড় বাড়ছে। মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে নমুনা দিচ্ছেন। তবে তারা নমুনা দিতে গিয়ে নানা ভোগান্তি নিয়ে অভিযোগ করছেন। রাজধানীতে নমুন দিতে সবচেয়ে বেশি ভিড় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী করোনা ইউনিটে।