করোনা ভাইরাসের কালো ছায়া পড়েছে গোটা পৃথিবীর ওপর। দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ইতালিতে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার ৫৯১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। পৌনে এক লক্ষেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন।
ঠিক এমন সময়ে ইতালির এক চিকিৎসক আশার আলো দেখালেন বাংলাদেশকে। ইতালির ইউনিভার্সিটি অব বালোনিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব মেডিকেল অ্যান্ড সার্জিকেল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মারিনা টাডোলিলি সম্প্রতি কথা বলেছেন ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশি লেখক মাহমুদ মনির সঙ্গে। সেই আলাপনেই উঠে এসেছে ইতালিতে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও বাংলাদেশে ঝুঁকির নানা দিক।
জানিয়েছেন, প্রচণ্ড রোদ কিংবা গ্রীষ্মকালীন গরমের কারণে করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে ইতালি কিংবা ইউরোপের মতো ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়বে না। বরং গরমের কারণে করোনা সংক্রমণ বাংলাদেশে অনেকটাই কম হবে।
ড. মারিনা মনে করেন, ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় করোনা ভাইরাস তুলনামূলকভাবে বেশি ছড়ায়।
ইতালিতে জনসংখ্যার গড় বয়স ৪৬ বছর। কিন্তু বাংলাদেশে ততটা নয়। এটাও করোনা সংক্রমণ থেকে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে বলে মনে করেন ড. মারিনা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মের জনসংখ্যা প্রচুর। তাই সেখানে আক্রান্তের সংখ্যাও কম থাকবে। এমনকি মৃত্যুর হারও।’
তার দেয়া আরও মারাত্মক তথ্য হলো- কোনও রকমের লক্ষণ ছাড়াই মানবদেহে দিনের পর দিন করোনা ভাইরাস টিকে থাকতে পারে। ইতালিতে বহু রোগীর ক্ষেত্রে নিজের চোখেই তেমনই দেখেন ড. মারিয়া।
ড. মারিনা বলেন, ‘১ মিটারের বেশি দূরত্বে থাকলে পিপিই ছাড়াই আক্রান্ত রোগীর সিম্পটমেটিক চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। আর তরুণ রোগীদের শুরুতেই কোনও ওষুদের দরকার নেই। প্রয়োজনে এজিথ্রোমাইসিন ব্যবহার করা যেতে পারে।’
তবে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় যথারীতি শারীরিক যোগাযোগ অবশ্যই এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন ড. মারিনা।
এছাড়াও ঘরের বাইরে যেকোনও জিনিস, যেমন হাটবাজার, কাঁচা সবজি, ফলমূল স্পষ্ট করার পর ঘরে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
গেল কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, সপ্তাহের শেষ নাগাদ এ তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। সঙ্গে আবহাওয়াও শুষ্ক থাকবে। আর তাতে গরমও পড়তে অত্যধিক।
করোনা ভাইরাসের এই মহাসংকটকালে গা পোড়ানো গরম সহ্য করে হলেও বাংলাদেশের মানুষ ড. মারিনার কথায় স্বস্তি খুঁজে পাবে- এটা নিশ্চিত।
বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ৪৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫ জন। অর্থাৎ আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার প্রায় ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। সুস্থ হয়েছেন ১৯ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ২৫ জন। এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৩৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।