সর্দিজ্বরের উপসর্গ দেখা দিলে কী করবেন

মারণঘাতী করোনাভাইরাস একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে দ্রুত ছড়ায়। সেকারণে মানুষ খুব দ্রুত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। যদিও এখনো পর্যন্ত কোন ঔষধ বা ভ্যাকসিন বের করা যেতে পারেনি। এরকম সময়ে আপনার নিজেকে বাঁচানো সবথেকে বেশি প্রয়োজন। এই ভাইরাসের সংক্রমণকাল মোটামুটি পনের দিনের হয়ে থাকে। করোনাভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। এই ভাইরাস ফুসফুসের মধ্যেই বেশি বংশ বৃদ্ধি করে।

করোনাভাইরাস শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে সর্দিজ্বর। তারপর দেখা দেয় শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হয়। এক সময় দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যায়। তাই করোনাভাইরাস থেকে সাবধান থাকতে হবে। সর্দিজ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই সর্দিজ্বর আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি অন্যের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারেন। সর্দিজ্বর যেন ছড়িয়ে না পরে সেজন্য কয়েকটি পদক্ষেপ মেনে চলা যায়।

গরম পানি ও সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। হাত ধোয়ার জন্য কোন ভালো সাবান অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন। ঠান্ডা বা সর্দিজ্বর আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে তোয়ালে বা গৃহস্থালির দ্রব্যাদি (যেমন কাপ, প্লেট) শেয়ার না করা। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পর নিজের চোখ বা নাক স্পর্শ না করা। হাতের দ্বারা এটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায়, সেইজন্য হাত মেলানো থেকে বেঁচে থাকা উচিত।

করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে আগাম সতর্কতার অংশ হিসেবে জ্বর, সর্দি, কাশি কিংবা গলাব্যথায় অসুস্থ বোধ করছেন, এমন ব্যক্তিদের গণপরিবহন ব্যবহার না করাই শ্রেয়।

টানা সাতদিনের বেশি সর্দিজ্বর থাকলে বা টানা তিনদিনের বেশি সর্দির সাথে উচ্চমাত্রায় জ্বর কিংবা বুকে ব্যথা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।

পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম নিতে হবে। ঘুম মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কাজেই সর্দিজ্বরের সময় বিশ্রাম নিলে বা বেশি ঘুমালে দ্রুত আরোগ্য লাভ সম্ভব। সর্দিজ্বরের সময় উষ্ণ পরিবেশে থাকা বা উষ্ণ পোশাক পড়ে থাকলে ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

প্রচুর পরিমাণ পানি বা ফলের রস পানের মাধ্যমে পানিশূন্যতা রোধ করলে সর্দিজ্বর বা ভাইরাস থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যেতে পারে। কারণ ভাইরাসটি আপনার মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করলেও সেটি পানির সঙ্গে পাকস্থলীতে চলে যাবে, আর পাকস্থলীর এসিড মুহূর্তেই সেই ভাইরাসকে মেরে ফেলবে।

ঠান্ডা বা সর্দিজ্বরের সময় একটি সাধারণ উপসর্গ গলা ব্যাথা। লবণ পানি দিয়ে গার্গল করা অথবা লেবু এবং মধু দিয়ে হালকা গরম পানীয় তৈরি করে পান করলে গলা ব্যাথা দ্রুত উপশম হতে পারে।

মিষ্টি আলু, বিটের মূল, কয়েকটি বিশেষ ধরনের কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণ বেটা-ক্যারোটিন থাকে যেটিকে আমাদের দেহ ভিটামিন এ’তে রূপান্তরিত করে। ভিটামিন এ আমাদের নাক এবং ফুসফুসের মিউকোসাল লাইনিংকে শক্ত রাখে যা নাগ ও ফুসফুসকে ইনফেকশনের হাত থেকে বাঁচায়। পাশাপাশি কমলা, আম, তরমুজসহ লাল ফল একই ধরনের কাজ করে।

সর্দিজ্বর থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে ভিটামিন সি’র ভূমিকা অনেক আগে থেকেই প্রমাণিত। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল এবং সবজি যেমন কমলা লেবু, আমলকি, ব্রোকলি, টমেটোর জুস প্রতিদিন খাওয়া দরকার।

এছাড়া খাবারে যথেষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ ও রসুন থাকলেও ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। পেঁয়াজ ও রসুনে এক ধরনের তেল থাকে যা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।

সূর্যের আলো বা অন্য কোনো উৎসের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি গ্রহণও শরীরকে ঠান্ডা ও সর্দিজ্বরের হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।

শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ১৯৩০ এর দশকে ভিটামিন সি ছিল সবচেয়ে প্রচলিত চিকিৎসা। গবেষণায় প্রামাণিত, ভিটামিন সি ভাইরাসজনিত রোগ উপশমে অনেকবেশি কার্যকর।

সর্দিজ্বরের সময় আপনি ভাইরাসমুক্ত রয়েছেন কীনা যেজন্য নিজেই ছোট পরীক্ষা করতে পারেন। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে সেটাকে দশ সেকেন্ডের কিছুটা বেশি সময় ধরে আটকে রাখুন। যদি এই দম ধরে রাখার সময়ে আপনার কোনও কাশি না আসে, বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভব না হয়, মানে কোনও প্রকার অস্বস্তি না লাগে, তার মানে আপনার ফুসফুসে কোনও ফাইব্রোসিস তৈরি হয়নি অর্থাৎ কোনও ইনফেকশন হয়নি, আপনি সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত আছেন।