করোনা থেকে বাঁচতে আল্লামা শফীর ৫ পরামর্শ

চীনের উহান শহর থেকে বের হয়ে এখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। যা এখন সবার মাঝে এক মহাআতঙ্ক ও মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আর এ ভাইরাস থেকে বাঁচতে পাঁচটি শরীয়াভিত্তিক পরামর্শ প্রদান করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর, দারুল উলুম হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি জনগণের প্রতি পাঁচটি পরামর্শ প্রদান করেন।

বিবৃতিতে আল্লামা আহমদ শফী বলেন, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে কিছু পরামর্শ দিতে চাই!

১. ধৈর্য ধারণ: রোগ-মহামারী কিংবা দুর্যোগ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে আসে। বান্দাদের পরীক্ষা করতে বিভিন্ন সময় আল্লাহ তায়ালা এমন করে থাকেন। যেমন পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে ধৈর্য ধারণকারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ।’ (সূরা বাকারা: ১৫৫)

তাই বর্তমান সময়ে আমাদের উচিত হবে ধৈর্য ধারণ করা, আল্লাহ তায়ালার ওপর বিশ্বাস আরেও সুদৃঢ় করা এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

২. যাতায়াত: মহামারী কিংবা ভাইরাস নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী এমন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। রাসূল (সা.)-এর সময়েও এমন মহামারী রোগ ছড়িয়েছিল।

মানবতার মুক্তির দূত রাসূল (সা.) এর সমাধানও দিয়ে গেছেন। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যদি তোমরা মহামারীর কোনো সংবাদ শোন, তো সেখানে তোমরা প্রবেশ হতে বিরত রাখ। আর যদি কোনো শহরে বা নগরে কেউ সে মহামারীতে আক্রান্ত হয়, তো সেখান থেকে তোমরা বের হয়ো না।’ (বুখারী শরীফ : হাদীস নং ৫৩৯৬)

তাই কোথাও মহামারী কিংবা সংক্রমণ ব্যাধি দেখা দিলে ওই জায়গা থেকে প্রস্থান করা অনুচিত। তাই আমাদের হাদিসটির উপর আমল করে গমন ও প্রস্থান বিষয়ে সতর্কতা; প্রয়োজনে কড়াকড়ি আরোপ করা উচিত।

৩. দোয়ার আমল করা: পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছাতেই ঘটে। তবে সবকিছুর কারণ ও প্রতিকার বুঝতে আমরা সামর্থ্য রাখি না। কারণ আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে কৌশলী ও প্রজ্ঞাবান। তাই এহেন মুহূর্তে আমাদের উচিত হবে মসজিদে ও ঘরে সম্মিলিত কিংবা একাকীভাবে দোয়ার আমল করা। আল্লাহর কাছে সমস্ত অপরাধ ও পাপ থেকে ক্ষমা চাওয়া এবং করোনাভাইরাসসহ সর্বপ্রকার রোগ থেকে পরিত্রাণ চাওয়া। কারণ কান্না বিজড়িত দোয়া আল্লাহ তায়ালার আজাব কমাতে পারে।

৪. কুনুতে নাজেলা পড়া: প্রত্যেক মসজিদে কাল ফজর থেকে কুনুতে নাজেলা পড়া হোক। কারণ কুনুতে নাজেলার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে বিশেষ আর্জি করা হয়। যেমন হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল (সা.) ফজরের নামাজের সময় সর্বদা কুনুতে নাজেলা পড়তেন না। শুধু পড়তেন কোনো জাতির জন্য দোয়া করতে বা বদদোয়া করার প্রয়োজন হলে। তিনি কুনুতে নাজেলা পড়তেন যখন ফজরের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতের রুকু থেকে মাথা উঠাতেন।

আরবের বিভিন্ন দেশে মানুষ মসজিদে যাচ্ছে না। জুমার নামাজে অংশ নিচ্ছে না। এটা অনুচিত ও গর্হিত কাজ। যে আল্লাহ তায়ালা এই রোগ দিয়েছেন তার কাছেই মুক্তি চাওয়াই প্রকৃত মুমিনের কাজ। তাই মসজিদে মসজিদে কুনুতে নাজেলার আমল করা হোক।

৫. নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা: সর্বাবস্থায় নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখুন। নিজেকে জীবাণুমুক্ত রাখুন, দুহাত ধৌত করুন। সব সময় অজু অবস্থায় থাকতে চেষ্টা করুন। ময়লা-আবর্জনার মাধ্যমে কোনো ব্যাধি যেন না ছড়ায় সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন। কারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রোগ নিরাময়ে সহযোগী এবং একটি সুন্নাহসম্মত কাজ।