রোগমুক্তি ও উত্তম রিজিক লাভে যে দুই আমল করবেন

আধুনিক ও সভ্য পৃথিবী আজ ব্যস্ত ও অস্থির দুটি জিনিসের পেছনে- এক. রিজিক তথা জীবিকার অন্বেষণ। দুই. মউত তথা মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টা।

অথচ অবধারিত সত্য হচ্ছে- এ দুটি বিষয় অনেক আগে থেকে নির্ধারিত ও মীমাংসিত। জীবিকার জন্য মানুষ কত কিছুই না করছে! চিরসত্য হচ্ছে- ভাগ্যে যা লিপিবদ্ধ আছে, এর বাইরে কেউ কিছু অর্জন করতে পারে না।

জীবিকা প্রসঙ্গে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘পৃথিবীতে চলমান সকল প্রাণীর জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর। তিনি তাদের অবস্থানস্থল ও সংরক্ষণস্থল জানেন। সবকিছুই এক স্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে’ (সূরা হুদ : ৬)।

অন্যত্র আল্লাহপাক বলেন, ‘কোনো প্রাণীই জানে না, আগামীতে সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না তার মৃত্যু কখন কোথায় হবে’ (সূরা লোকমান : ৩৪)।

আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্যই হচ্ছে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার চূড়ান্ত পথ। আল্লাহ বলেন -আর যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই কৃতকার্য। (সুরা নূর, আয়াত -৫২)

দুনিয়া অর্জনের আকাঙ্ক্ষায় যেন আমরা আখিরাতের জীবনের নেক আমল অর্জন থেকে গাফেল না হই। আমরা যখন চিরসুখের জান্নাত লাভে সক্ষম হব তখনই আসবে আমাদের জীবনে সত্যিকার সফলতা।

দুনিয়ার কল্যাণ লাভ ও পরকালকে আলোকিত করার জন্য মুমিনের ২টি নিয়মিত আমল রয়েছে। আমল দুইটি যথাযথ পালনে একদিকে যেমন রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যাবে আবার তা হবে উত্তম রিজিক লাভের মাধ্যম।

আমল ২টি হলো- মুমিনের ওজু ও নামাজ।

হজরত নুআইম ইবনে আবদুল্লাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন তিনি হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ওজু করতে দেখলেন। ওজু করার সময় তিনি মুখমণ্ডল ও উভয় হাত এমনভাবে ধুয়ে নিলেন, যেন প্রায় কাঁধ পর্যন্ত ধোয়া হয়ে গেল। তারপর উভয় পা এমনভাবে ধুয়ে নিলেন যে পায়ের নালার কিছু অংশ ধোয়া হয়ে গেল। ওজুর করার পর তিনি বললেন- আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমার উম্মত ওজুর কারণেই কেয়ামতের দিন দীপ্তিময় মুখমণ্ডল ও হাত-পা নিয়ে ওঠবে। কাজেই তোমাদের যারা সক্ষম তারা যেন অধিক বিস্মৃত দীপ্তিসহ (পরকালে) উঠতে চেষ্টা করে।’ (মুসলিম)

আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন – অবশ্যই মুমিনরা সফল হয়েছে, যারা নিজদের সালাতে বিনয়াবনত। আর যারা অনর্থক কথাকর্ম থেকে বিমুখ। (সুরা মুমিনুন,আয়াত-১.৩)

আখিরাতে সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। যার নামাজের হিসাব সহজ হয়ে যাবে তার পরবর্তী ধাপগুলো সহজ হয়ে হবে। নামাজ হবে ওই ব্যক্তির জন্য জ্যোতি বা আলোকবর্তিকা।

হাদিসে এসেছে- হজরত আবু মালিক আল-আশআরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ওজু ঈমানের অর্ধেক। আলহামদুলিল্লাহ দাঁড়িপাল্লাকে পূর্ণ করে দেয়। সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ একসঙ্গে আকাশমণ্ডলী ও জমিনের মধ্যবর্তী জায়গা ভর্তি করে দেয়। নামাজ হলো নূর (জ্যোতি), সদকা (দান-খয়রাত) হলো (মুক্তির) দলিল এবং ধৈর্য ও সহনশীলতা হলো আলোকবর্তিকা।

কোরআন তোমার সপক্ষে অথবা বিপক্ষে সনদ বা সাক্ষ্যস্বরূপ। ভোরে উপনীত হয়ে প্রতিটি মানুষ নিজেকে বিক্রয় করে। (এর মাধ্যমে) সে নিজেকে হয় আজাদ করে অথবা ধ্বংস করে। (তিরমিজি)

ওজু ও নামাজ এমন দুইটি আমল। যা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য দিনে ৫বার আদায় করা আবশ্যক। নামাজ মানুষের জন্য ফরজ ইবাদত। আর নামাজের জন্য ওজু করাও ফরজ। তাই ওজু ও নামাজ একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পর্কিত।

আমাদের জীবন সামান্য কিছু সময়ের সমষ্টি মাত্র। দুনিয়ার এই ক্ষণিক মুহুর্তেও এমন কে নেই, যে সফলতার সুধা পান করতে চায় না। আসুন, যথাযথভাবে ওজু ও নামাজের মধ্য দিয়ে আমরা সফলতা অর্জন করি।