কিটো ডায়েট: ওজন কমবে দ্রুত, হার্ট থাকবে সুস্থ

কিটো ডায়েট, কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত ডায়েট হিসাবেও পরিচিত। এই বিশেষ ধরনের ডায়েট প্ল্যানটি মেনে চললে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একেবারে এড়িয়ে চলতে হবে। পরিবর্তে বেশি করে খেতে হবে প্রোটিন এবং ফ্যাট জাতীয় খাবার। আর তা থেকেই শরীরের এনার্জির ঘাটতি মিটবে। মস্তিষ্কের দৈনন্দিন কাজকর্ম চালাতে যে যে উপাদানের প্রয়োজন পড়বে, শরীর তাও সংগ্রহ করবে প্রোটিন এবং ফ্যাটি খাবার থেকেই।

কার্বোহাইড্রেড জাতীয় খাবার খাওয়া একেবারে বন্ধ করে দিলে শরীর যে বিশেষ মেটাবলিক স্টেটে চলে যায়, তাকেই চিকিৎসার ভাষায় কিটোসিস নামে ডাকা হয়ে থাকে। আর সেই থেকেই এই ডায়েটের নাম কিটো ডায়েট।

চিকিৎসকেদের মতে শরীর যখন কিটোসিস স্টেটে থাকে, তখন প্রচুর মাত্রায় ফ্যাট বার্ন হয়, যে কারণে ওজন কমতে একেবারেই সময় লাগে না। শুধু তাই নয়, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার না খাওয়ার কারণে ব্লাড সুগার এবং ইনসুলিন লেভেল একেবারে ঠিক থাকে।

কিটো ডায়েটের উপকারিতা :

মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে

কিটো ডায়েট মেনে খাবার খেলে শরীরে নিউরনের ক্ষমতা বাড়ে। সঙ্গে মস্তিষ্কের ভিতরে এমন কিছু এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যার প্রভাবে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে চোখে পড়ার মতো। এমনকি অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগও ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। বৃদ্ধি পায় স্মৃতিশক্তিও

হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে

এই বিশেষ ডায়েট প্ল্যানটি মেনে খাবার খেলে একদিকে যেমন ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে, তেমন ব্লাড প্রেসারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও কমে চোখে পড়ার মতো। ফলে হার্টের কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না। চিকিৎসকদের মতে বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেলে ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর এক্ষেত্রে যেহেতু একেবারেই ‘কার্ব রিচ’ খাবার খাওয়া হয় না, তাই ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যাওয়া কারণে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না।

শরীরের ভিতরে প্রদাহের মাত্রা কমে

বেশ কিছু স্টাডির পর একথা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে কিটো ডায়েট মেনে খাবার খেলে শরীরে প্রদাহের মাত্রা কমে। ফলে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যেমন থাকে না, তেমনি ছোট-বড় নানা রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কাও যায় কমে। তাই এই বিষয়ে দ্বিমত নেই যে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি লুকিয়ে কিটো ডায়েট চার্টে।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের প্রকোপ কমায়

বিশেষজ্ঞদের মতে কিটোজেনেটিক ডায়েট মেনে (কেটো ডায়েট চার্ট) খাবার খেলে শরীরে ইনসুলিন লেভেল ঠিক থাকে, যে কারণে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। তবে এই ব্যাপারে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।

কী কী খাবারকে কিটো ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়?

এক্ষেত্রে ডায়েটিশিয়ানরা শরীর অনুযায়ী ডায়েট চার্ট তৈরি করে থাকেন। তবে যে যে খাবারকে (Ketogenic Diet Foods) এই ডায়েট প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে, সেগুলো হলো:

* তেল (অলিভ এবং নারিকেল তেল)

* অ্যাভাকাডো

* ক্রিম

* পনির

* বাদাম

* সবুজ শাক-সবজি

* শসা, ব্রকলি এবং ফুলকপির মতো সবজি

* মুরগির মাংস এবং মটন

* ডিম

* মাছ

কিটো ডায়েটের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

সঠিক নিয়ম অনুযায়ী এই ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ না করলে একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষত, মাথা যন্ত্রণা, ক্লান্তি, খিদে বেড়ে যাওয়া, ঘুম কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা এবং শরীরিক ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুখে দুর্গন্ধ , মাসল ক্র্যাম্প, নানা ধরনের পেটের রোগ এবং কিডনিতে স্টোন হওয়ার মতো রোগও লেজুড় হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

কখনও যদি সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে আলোচনা করে কিটো ডায়েট বন্ধ করে দেওয়া উচিত।