রাজধানীর বাড্ডায় তাসলিমা বেগম রেনু হত্যাকাণ্ডে ‘ছেলেধারা’ প্রচারণাকারী মোছা. রিয়া বেগম ওরফে ময়না আদালতে তার দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এদিন হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত হৃদয় ওরফে ইব্রাহিমও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জানা গেছে, স্কুলে ভর্তির কথা বলার সময় বাসার ঠিকানা জিজ্ঞেস করায় ‘সন্দেহ’ করে রেনুকে ছেলেধরা বলে চিৎকার করেন রিয়া। পরে অন্যান্যদের সঙ্গে মিলে তাকে নির্মমভাবে পেটায় হৃদয়।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মাদ মিল্লাত হোসেন তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন এবং পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে রেনুকে প্রথম ছেলেধরা আখ্যা দেওয়া নারী মোছা. রিয়া বেগম ওরফে ময়নাকে (২৭) গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় সাঁতারকুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে বাড্ডা থানা পুলিশ।
বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গ্রেপ্তার রিয়া বেগমকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে বাড্ডা পুলিশ।
গত ২৪ জুলাই আদালত হৃদয় ওরফে ইব্রাহিমের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তিনি রিমান্ডে থাকাবস্থায় দোষ স্বীকার করতে রাজী হওয়ায় এবং রিয়া খাতুন গ্রেপ্তারে পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দোষ স্বীকার করতে রাজী হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাড্ডা থানার ইন্সপেক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করানোর জন্য আদালতে হাজির করেন।
এ মামলায় জাফর হোসেন নামে আরেক অভিযুক্ত এর আগে গত ২২ জুলাই দোষস্বীকার করে কারাগারে রয়েছেন।
এ ছাড়া মামলাটিতে মুরাদ মিয়া (২২), মো. সোহেল রানা (৩০), মো. বিল্লাল (২৮), মো. আসাদুল ইসলাম (২২), মো. রাজু (২৩), মো. শাহীন, মো. বাচ্চু মিয়া, মো. বাপ্পি, মো. কামাল হোসেন ও আবুল কালাম আজাদ রিমান্ডে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২০ জুলাই রাজধানীর বাড্ডার কাঁচাবাজারের সামনে বাড্ডা প্রাইমারি স্কুলে সন্তান ভর্তি খোঁজখবর নিতে গিয়ে উচ্চশিক্ষিতা তাসলিমা বেগম রেনু ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হন।
সেদিন ছোট মেয়ে তুবাকে স্কুলে ভর্তির জন্য বাড্ডা গিয়েছিলেন রেনু। সেখানে তিনি রিয়া বেগমকে স্কুলের ব্যাপারে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞাসা করেন। এক পর্যায়ে ওই অভিভাবকের বাসার ঠিকানা জিজ্ঞাসা করেন তিনি। এ সময় তার কথায় সন্দেহ করে ‘ছেলেধরা’ ‘ছেলেধরা’ বলে চিৎকার শুরু করেন রিয়া।
এ ঘটনায় তিন নারীকে আটক করে স্থানীয়রা। কিন্তু দুজন পালিয়ে গেলেও গণপিটুনির শিকার হন তাসলিমা বেগম রেনু। তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে জখম করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।