চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় মাদরাসা ছাত্র আবির হুসাইনকে (১১) বলাৎকারের পর গলা কেটে হত্যা করা হয়। বুধবার সকালে উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের একটি আমবাগান থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বলাৎকারের পর তা ধামাচাপা দিতেই গলাকেটে হত্যা করে কেটে ফেলা মাথা গুম করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম বলেন, মাদরাসা ছাত্র আবির হত্যার নেপথ্যে আমরা বেশ কিছু তথ্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক গুজবের সঙ্গে এ হত্যার কোনো সর্ম্পক নেই। সুকৌশলে হত্যার ঘটনাটি ভিন্নখাতে দিতেই নিহত ওই ছাত্রের মাথা কেটে গুম করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরো জানান, প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে নিহত ওই ছাত্রকে দীর্ঘদিন ধরে যৌন নির্যাতন চালানো হচ্ছিল। যৌন নির্যাতনের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতেই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় তাকে। ময়নাতদন্তে এ বিষয়টি উঠে এসেছে।
কয়রাডাঙ্গা নুরানী হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার নুরানী বিভাগের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র আবির ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী হোসেনের ছেলে। এ ঘটনার পর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মাদরাসার পাঁচ শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। আটককৃতদের হাতের ছাপ সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে ঢাকায়।
মাদরাসাটির মুহতামিম মুফতি আবু হানিফ জানান, ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আবির হুসাইন প্রায় এক বছর আগে এই মাদরাসায় ভর্তি হয়।তার মা কমেলা খাতুন তাকে ভর্তি করান। আবির হুসাইন মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়াশুনা করত।
মুফতি আবু হানিফের মতে মঙ্গলবার এশার নামাজের একটু আগে আবির হুসাইন নিখোঁজ হয়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় গ্রামের বিভিন্ন স্থানে অনেক খোঁজাখুজি করেও আমরা তার সন্ধান মেলাতে পারেনি। এরপর সকালে গ্রামবাসী মাদ্রাসার অদূরে একটি আমবাগানে আবিরের মাথাবিহীন মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান মুন্সি জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কানাই লাল সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহসহ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশ নিহতের ছাত্রের মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠাতে গেলে উত্তেজিত হয়ে ওঠে গ্রামবাসী। তারা মাদ্রাসাছাত্র আবিরের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
পরে পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান গ্রামবাসীদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে গ্রামবাসীকে শান্ত থাকারও অনুরোধ জানানো হয়। আশ্বাস দেওয়া হয় ঘাতকের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার।
চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ জানান, দিনভর পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট কাজ করার পর আমাদের হাতে কিছু তথ্য আসে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হয়। এরই মধ্যে হাসপাতাল থেকে তথ্য পাওয়া যায়- নিহত মাদরাসা ছাত্র আবির হুসাইনের মলদ্বারে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ তথ্যের পর হাসপাতালে ছুটে যান জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমানসহ তদন্তকারী দল।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের বর্ণনা দিয়ে মো. কলিমুল্লাহ বলেন, ওই ছাত্রকে দীর্ঘদিন ধরে বলাৎকার বা যৌন নির্যাতন চালানো হতো। নির্যাতনের ঘটনাটি ধামাচাপি দিতেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।
মাদরাসা ছাত্রকে যৌন নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. শামীম কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে সে রকমই মনে হয়েছে। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা ডিএনএ টেস্ট ও নিহতের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকাতে পাঠিয়েছি।
এদিকে, বিকালে র্যাবের সদর দপ্তর থেকে হেলিকপ্টারযোগে ডগস্কোয়াড নিয়ে একটি বিশেষ দল চুয়াডাঙ্গা আসেন। টিমের সদস্যরা সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ঘটনাস্থলসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার অনুসন্ধান চালিয়েও নিহত মাদরাসা ছাত্রের মাথা উদ্ধারে ব্যর্থ হন।