ঢাকা: অসুস্থ শিশুকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করার সময় রাজধানীর হাইকোর্ট এলাকা থেকে কথিত বাবা-মাকে আটক করেছে পুলিশ। গত বুধবার বিকালে শাহবাগ থানা এলাকায় হাইকোর্টের মাজার গেটের সামনে অসুস্থ শিশুটিকে নিয়ে এক দম্পতি ভিক্ষা করছিলেন। এরপর শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যান পুলিশ সদর দফতরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুলতানা ইশরাত জাহান।
বুধবার (১৭ জুলাই) বিকালে এ সময় ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুলতানা ইশরাত জাহান। তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টারে কর্মরত রয়েছেন। অফিস শেষে বাসায় ফিরছিলেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে এএসপি সুলতানা ইশরাত জাহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি আমার সন্দেহ হয়। একজন বাবা অসুস্থ শিশুকে নিয়ে কীভাবে সাহায্য চাচ্ছেন। আমি লোকটির কাছে জানতে চাইলে তিনি ঠিক উত্তর না দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তাকে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।’ এদিকে শিশুটিকে তার কথিত মা জোসনাসহ দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। শিশুটির পিঠে পুরাতন পোড়া জখম রয়েছে। সে খুবই অসুস্থ।
তিনি বলেন, ‘শিশুটিকে নিয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করি। প্রথমে শিশুটিকে বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে জেনারেল ওয়ার্ডে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখান থেকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। এখানে প্রথমে ভর্তি না নিতে চাইলেও পরে তারা শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি নেন। সেখানে নেওয়ার পর ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা শিশুটিকে দেখে জানান, তার অবস্থা খুবই খারাপ। তাকে এখানে রাখা যাবে না। তার এই মুহূর্তে আইসিইউ দরকার। সেখানকার চিকিৎসকরা কিছুক্ষণ অক্সিজেন দিয়ে রেখে শিশুটিকে মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে রেফার করেন। পরে আমি অক্সিজেন লাগিয়ে একটি ভাড়া অ্যাম্বুলেন্সে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মহাখালীর ওই হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেই।’
এএসপি বলেন, ‘মানবিক দিক থেকে শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য আমার যতটুকু চেষ্টা করা দরকার, আমি তা-ই করবো।’
বিষয়টি নিয়ে শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) শফিউল আলম বলেন, ‘শিশুটির কথিত বাবাকে আটক করে থানায় রাখা হয়েছে। শিশুটির সঙ্গে থাকা কথিত মা জোসনা বলেন, তারা হাইকোর্টে ফুটপাতে থাকে। ভিক্ষা করে।’
পুলিশের জেরার মুখে জোসনা জানান, ৭ মাস আগে এক মহিলা তার কাছে শিশুটিকে দিয়ে চলে যায়। সেই থেকে তাদের কাছেই আছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, শিশুটি পুষ্টিহীনতা, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।
এএসপি সুলতানা ইসরাত জাহান জানান, ঢামেক হাসপাতাল থেকে যেসব সমস্যার কথা বলা হয়েছে, মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানকার চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানিয়েছেন তার ওই ধরনের কোনও সমস্যা নেই। তাই তারা আবার শিশুটিকে ঢামেক হাসপাতালে রেফার করেন। শিশুটি এখন ঢামেকে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এদিকে, সে শিশুর অবস্থা ভাল নয়। উদ্ধারের দিন গত ১৮ জুলাই থেকে সানজিদা নামের আনুমানিক ৭/৮ মাস বয়সী এই শিশু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে চিকিৎসাধীন। শিশুটির পিঠে কিছুটা দগদগে পোড়া দাগ ছিল ও মাংস কিছুটা বের হয়েছিল।
অন্যদিকে, ঢাকা মেডিকেলে আনার পর ধরা পড়ে শিশুটি নিউমোনিয়া ও মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত। এই কয়দিন হাসপাতাল জীবনে কয়েকবার খিঁচুনিও হয় সানজিদার। সোমবার (২২ জুলাই) ঢাকা মেডিকেলের শিশু বিভাগে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখা যায় শিশুটিকে। তার মুখে অক্সিজেনের মাস্ক লাগানো ছিল, কোমল দেহের চামড়ায় সুঁচ দিয়ে স্যালাইন চলছিল তখন। ২০৮ নম্বর ওয়ার্ডের তিন নম্বর বেডে শোয়া ছিল শিশুটি।
এ ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ওকে আমরা ঘন ঘন দেখাশোনা করছি। খুব কষ্ট লাগে ওকে দেখলে।
এ বিষয়ে ৬০৮ নম্বর ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার তাসনুভা খান বলেন, এই বয়সে যেমন ওজন থাকার কথা, তা ওর নেই। তাছাড়া বয়স অনুপাতে তার মস্তিষ্কের আকারও ছোট। জন্মগত ত্রুটির কারণে এটা হতে পারে। এছাড়া বয়স অনুযায়ী দরকারি যত্ন হয়ত পায়নি, সে কখনও বসতে পারেনি, দাঁড়াতেও হয়ত পারেনি। তার খিঁচুনি আছে। এটা মনে হয় জন্মগত সমস্যা। হাসপাতালে আনার পরও কয়েকবার খিঁচুনি হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পোড়া দাগটা আগের। তার নিউমোনিয়ার তীব্রতা কমেছে। খিঁচুনিটা কমেনি। ওষুধ পরিবর্তন করে আরও শক্তিশালী ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
এদিকে, শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার প্রশ্নে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সাধ্যমতন। ঢাকা মেডিকেলের যতটুকু সক্ষমতা আছে, ততটুকু দেয়া হচ্ছে শিশুটিকে।
বিষয়টি নিয়ে এএসপি ইসরাত জাহান জানান, বাচ্চাটির অবস্থা আসলেই ভাল না। আমরা খুব চেষ্টা করছি যে, কিভাবে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। তার আইসিসিউ সাপোর্টও লাগতে পারে। সেই চেষ্টাই আমরা চালাচ্ছি।
সোনালীনিউজ/