ঘটনাটি হাস্যকর এবং উদ্ভট হলেও, চাঁদে জমি বিক্রি করে যিনি কামাচ্ছেন হাজার হাজার ডলার

বিচিত্র জগৎ ডেস্ক: রাস্তা ঘাটে হাঁটাচলার সময় হোক কিংবা ইন্টারনেট সার্ফিং, প্রতিনিয়তই আমরা নানান অদ্ভুত বিজ্ঞাপন বা পোস্ট দেখে থাকি। এসকল বিজ্ঞাপনের মধ্যে কিছু হাস্যকর আবার কিছু কিছু বিজ্ঞাপন অদ্ভুত হলেও অনেক স্পর্শকাতর। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন কোনও মানুষ চাঁদ বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছে? আবার সেই বিজ্ঞাপন দেখে মানুষ চাঁদ কেনার চেষ্টাও করেছে?

হ্যাঁ, ঘটনাটি হাস্যকর এবং উদ্ভট হলেও সত্য। আমেরিকায় রয়েছে এমন এক ব্যাক্তি যে কিনা চাঁদকে নিজের সম্পদ হিসেবে দাবি করে। শুধু চাঁদকে নিজের সম্পদ বলে ক্ষান্ত নন এই ব্যক্তি। তিনি পত্রিকা এমনকি ওয়েবসাইট খুলে বসেছে চাঁদ বিক্রির জন্য। তাহলে দেরি না করে জেনে নেয়া যায় চাঁদ বিক্রি করে দেয়া মানুষটি সম্পর্কে-

ঘটনাটি ৮০ দশকের। স্নায়ুযুদ্ধে পুরো পৃথিবীতে চলছে অস্থিরতা। বেশিরভাগ মানুষই পারমাণবিক যুদ্ধ থেকে বাঁচার উপায় খুঁজছিলো। ঠিক তখনি ডেনিস হোপ নামক এক ব্যাক্তি পারমাণবিক যুদ্ধ থেকে বাঁচতে চাঁদে বসতি করার কথা ভাবলেন। ঘটনাটি ১৯৮০ সালের তবে প্রেক্ষাপট কিছুটা আগের। ডেনিস হোপ ছিলেন একজন জুতা বিক্রেতা। যে কিনা ডিভোর্স এর পরে দেউলিয়া হওয়ার পথে ছিল। তার জুতার ব্যবসাও প্রায় শেষের পথে ছিল। এমন সময় একদিন সন্ধ্যায় তিনি প্রোপার্টি বিক্রির কথা ভাবতে শুরু করে। কিন্তু কোনো প্রোপার্টিতে ইনভেস্ট করার মত মূলধন তার ছিলনা। ভাবতে ভাবতে তিনি জানলার দিকে তাকায় এবং চাঁদ দেখতে পায়।

তখনই তার মাথায় আসে চাঁদ বিক্রির কথা। এর থেকে বড় প্রোপার্টি তিনি আর কোথায়ই বা পাবে? ভাবনা অনুযায়ী হোপ কাজে লেগে পড়লেন। লোকাল লাইব্রেরি এবং অন্যান্য অনেক স্থান থেকে মহাকাশ সম্পর্কে লেখাপড়া শুরু করলেন। তিনি জানতে পারেন ১৯৬৭ সালের মহাকাশ চুক্তি সম্পর্কে। যেখানে স্পষ্ট লেখা ছিল যে পৃথিবীর কোনও দেশ মহাকাশের কোন বস্তু বা গ্রহকে নিজের দাবি করতে পারবে না। হোল এই চুক্তির মধ্যে একটি ভুল খুঁজে পায়। তা হল এই চুক্তিতে স্পষ্টভাবে কোনও দেশের কথা লেখা হয়েছে কোনও ব্যক্তি নয়। তাহলে চাইলেই কোনো ব্যক্তি চাঁদ বা অন্য কোনও গ্রহকে নিজের দাবি করতেই পারে।

আমেরিকার আইন অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি যদি মালিকবিহীন জমি কিংবা সম্পত্তি নিজের দাবি করে সরকারি কোনও কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষর করাতে পারে এবং অন্য কোন মানুষ বা কেউ তার দাবি না রাখে তবে সেই ব্যক্তিই ওই সম্পত্তির মালিক হয়ে যায়।

হোপ অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একটি ডকুমেন্ট তৈরি করে তা লোকাল মেয়রের অফিস থেকে সাইন করায়। সেই সাইন করা কপিসহ দুইটি চিঠি যথাক্রমে রাশিয়া এবং ইউএন এর কার্যালয়ে পাঠায়। কিন্তু এই চিঠি কেউ না পড়ার ফলে রাশিয়া বা ইউ এন এর কেউই চাঁদকে নিজের দাবি করেনি। এ কারণে আমেরিকার আইন অনুযায়ী ড্যানিস হোপই হয়ে যায় চাঁদ এর মালিক।

ড্যানিস হোপ মাত্র চাঁদের মালিক হয়েই থেমে থাকেনি। তিনি পত্রিকায় চাঁদ কিংবা চাদের জমি বিক্রির বিজ্ঞাপন ও দিয়েছেন। তিনি চাঁদে প্রতি একর জমি ২০ ডলার হিসেবে বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দেয়।

আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টারও তার কাছ থেকে চাঁদে জমি কিনেছে বলে জানা যায়। তার ওয়েবসাইট অনুযায়ী এখন পর্যন্ত তার কাছ থেকে সর্বোমোট ৬১১ মিলিয়ন একর জমি মানুষ কিনেছে। কিন্তু আসলেই কি তাই? তাহলে তো ড্যানিস হোপ এর পৃথিবীর সব চেয়ে বড় ধনীদের তালিকায় থাকার কথা।

আসলে পুরোটাই ড্যানিস হোপ এর সাজানো। সাংবাদিকরা তার কাছে চাঁদের দলিল দেখতে চাইলে তিনি নিজের বানানো একটি দলিল দেখায় যেখানে অনেক বানান ও গ্রামারে ভুল রয়েছে। তার অঞ্চলের মেয়রের অফিসে জানতে চাওয়া হলে তারা এ সম্পর্কে কিছু জানেনা বলে দাবি করেছে। আসল দলিল তিনি সুরক্ষিত রেখেছেন বলে দাবি করেন। তবে হ্যাঁ তার কাছ থেকে অনেকেই মজা করে কিংবা গিফট হিসেবে চাঁদের জমি ক্রয় করেছেন। যা থেকে তার বাৎসরিক ২৭ থেকে ৩০ হাজার ডলার আয় হচ্ছে। ড্যানিস হোপ ১৯৯৫ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নিজের বানানো এই স্ক্যাম থেকে আয় করছেন।