রামদা হাতে দুই খুনীর অনবরত কোপের মুখে স্ত্রীকে ফেলে রেখে দৌড়ও দিতেন পারেননি রিফাত শরীফ। দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও স্ত্রীর সাহসী ভূমিকা দেখে আলিঙ্গন করে নিয়েছেন মৃত্যুকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা যায়, দুজন উন্মত্ত খুনীকে টেনে ধরছিলেন সাহসী স্ত্রী আয়েশা আক্তার মিন্নি। একজনকে টেনে ধরলে আরেকজন কোপাচ্ছিল। মিন্নির সঙ্গে আরেকজনকে এগিয়ে আসতে দেখা গেলেও পাশেই বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু দেখেই যাচ্ছিলেন।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, দুর্বৃত্তরা শুধু রিফাতকেই কোপাচ্ছিল। মিন্নিকে আঘাত করছিল না। মিন্নির আরেক সহযোগীকেও তারা কিছু করেনি। শুধু রিফাতের ওপরই তাদের সব ঝাল মিটিয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আয়শা আক্তার মিন্নি নামের ওই তরুণীর দুই মাস আগে রিফাত শরীফের সঙ্গে বিয়ে হয়। তবে বিয়ের পর থেকেই নয়ন নামে এক যুবক তাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। ওই যুবক নিজেকে তরুণীর সাবেক স্বামী এবং প্রেমিক হিসেবে পরিচয় দিতে থাকে।
এ ঘটনায় রিফাতের সঙ্গে নয়নের বচসা হয়। এর জের ধরে বুধবার বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে দেশীয় অস্ত্রসহ দলবলে ওঁৎ পেতে থাকে নয়ন। রিফাত ও তার স্ত্রী মিন্নি সকালে ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা রামদা নিয়ে রিফাতের ওপর চড়াও হয়।
এসময় মিন্নি তাদের বাধা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। কিন্তু, তার বাধা সত্ত্বেও সন্ত্রাসীরা রিফাতের সারা শরীরে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। হাতে থাকা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে কোনও রকমে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালান রিফাত। কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না।
সন্ত্রাসীরা তার বুক, পিঠ, পাসহ সারা শরীর কুপিয়ে রক্তাক্ত করতে থাকে। মিন্নি এসময় একবার সন্ত্রাসী নয়নকে, আরেকবার নয়নের সহযোগী দুর্বৃত্ত রিফাত ফরাজীকে আটকানোর চেষ্টা করেন এবং ‘বাঁচাও’, ‘বাঁচাও’, ‘না’ ‘না’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু, ততক্ষণে রামদার কোপে মারাত্মক আহত হন রিফাত।
নিহতের স্বজনরা জানান, দুই মাস আগে রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে হয়। পরে মিন্নিকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেন বরগুনা পৌরসভার ধানসিঁড়ি এলাকার আবুবকর সিদ্দিকের ছেলে নয়ন। এ নিয়ে রিফাত ও নয়নের মধ্যে একাধিকবার ঝগড়া হয়। পরে মিন্নির ফেসবুক আইডি হ্যাক করে বেশ কিছু ছবি দিয়ে অপত্তিকর পোস্ট দেন নয়ন।
এ নিয়ে রিফাতের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া হয় নয়নের। বুধবার দুপুরে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে মিন্নি ও রিফাতকে পেয়ে নয়ন ও তার সহযোগীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়। এরপর স্থানীয়রা রিফাতকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিফাত।