ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলোচিত-সমালোচিত হামিদাকে নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন মিডিয়ায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে একটি প্রতারক চক্রের মুখোশ উন্মোচন করায় সংশ্লিষ্ট মিডিয়া ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন নানা পেশার মানুষেরা।
হামিদা একে একে ১১টি বিয়ে করে সর্বমহলে আলোচনায় এসেছেন। তবে বিয়ের পর প্রতারণা করাই তার পেশা ও নেশা। গত ২৩ জুন হামিদা ১১ তম বিয়ের পিঁড়িতে বসে জেলার পৌর এলাকার কাজীপাড়ার আবদুল্লাহ নামে এক যুবকে বিয়ের পর তার ‘বিয়ে বাণিজ্যের’ পর্দা ফাঁস হয়। আর এই পর্দা ফাঁস করেন জেলার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউপির ধর্মতীর্থ গ্রামের বাসিন্দা হামিদার ১০ তম স্বামী জহিরুল ইসলাম।
জহিরুল সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, হামিদা তার সঙ্গে সংসার করা অবস্থায় আবদুল্লাহ নামে যুবককে বিয়ে করেছেন। এর আগে হামিদা সিলেট এলাকার প্রবাসী আকরাম আলীকে ১২ লক্ষ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। বিয়ের দুইমাস পর তাকে তালাক দিয়ে হামিদা তার দেনমোহরের টাকা আদায় করেন। জহিরুল ও আকরাম আলী নামে দুই স্বামী থাকার মাঝেও হামিদা জেলার বিজয়নগর উপজেলার নোয়াবাদী এলাকার প্রবাসী কামরুল হাসানকে গোপনে বিয়ে করেন।
জহিরুল বলেন, হামিদা একসঙ্গে তিন স্বামীর সংসার করেন আলাদা আলাদা ভাবে গোপনে। তার টার্গেট প্রবাসী ও ব্যবসায়ী ধনাঢ্য ব্যক্তি। ইতোমধ্যে হামিদার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অন্তত ২৪ ব্যক্তি আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেক পরিবারে সৃষ্টি হয়েছে অশান্তি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউপির কলেজপাড়া এলাকার বালু মিয়ার মেয়ে হামিদা বেগম প্রতারণার ফাঁদ ফেলতে ভিন্ন ঠিকানা ও জন্ম তারিখ উল্লেখ করে তিনটি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন। তিনি ২০১৮ সালের ২০ জুলাই পাসপোর্ট (বিএম ০২২০৯১০) নিয়েছেন উপজেলার নোয়াগাঁও ইউপির আখিতারা গ্রামের বাসিন্দা পরিচয়ে।
এতে তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করেছেন, ১৭ জুলাই ১৯৮৫ইং। বাবার নাম দিয়েছেন বিল্লাল মিয়া। এর আগে ২০১৪ সালের ২৯ মে হামিদা কালিকচ্ছ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম নিবন্ধন নিয়েছেন। এতে তার জন্ম তারিখ ২৬ নভেম্বর ১৯৯৩। পিতার নাম উল্লেখ করেছেন আব্দুর রউফ। ২০০৬ সালে ৬ জুন গ্রহণ করা জাতীয় পরিচয়পত্রে হামিদা তার স্বামীর নাম উল্লেখ করেছেন আলমগীর মিয়া। জন্ম তারিখ দিয়েছেন ৯ মে ১৯৮৫ ইং।
এদিকে হামিদা বেগমের কয়েকটি বিয়ের কাবিন নামাসহ নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ের বিবাহের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিটি বিয়ের আগে হামিদা এক থেকে দেড়বছর বিয়ে ছাড়াই সংসার করেন এসব স্বামীদের সঙ্গে। কাগজে-কলমে বিয়ের পর কিছুদিনের মধ্যেই আবার এসব স্বামীদের তালাক দেন হামিদা। আদায় করে নেন মোটা অঙ্কের কাবিননামার টাকা।
এ ব্যাপারে হামিদা বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি ইচ্ছে করে এতসব বিয়ে করিনি। আমাকে একের পর এক বিয়ে দিয়ে অন্যরা বাণিজ্য করেছে। আমি পরিস্থিতির শিকার ছিলাম। সরাইলের শাহবাজপুর ইউপির কাজী মোহাম্মদ শওকত আলী আমার ছয়টি বিয়ে পড়িয়েছেন। তারা সকলে মিলেই বিয়ের দেনমোহরের টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। জহিরুলকে আমি আগেই তালাক দিয়েছি। এখন আমার স্বামী আবদুল্লাহ।
একাধিক পরিচয়পত্রের ব্যাপারে হামিদা বলেন, পাসপোর্ট দালালের মাধ্যমে করেছিলাম। তাই ঠিকানা ভুল হয়েছে। জন্ম তারিখ ভুল এটা কোন বিষয় না। আর আমার বাবাকে মানুষ বালু মিয়া, আব্দুর রউফ ও বিল্লাল মিয়া এই তিন নামেই ডাকতেন।