কুমারী পরিচয় দিয়ে দুই শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় বিয়ে করেন মিন্নি

‘আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি আগে নয়ন বন্ডকে বিয়ে করেছিল। ওই বিয়ে গোপন করে আমার ছেলে রিফাত শরীফকে বিয়ে করে মিন্নি। কিন্তু মিন্নি ও রিফাতের যখন বিয়ে হয় তখনও নয়ন বন্ডের বৈধ স্ত্রী ছিল মিন্নি। প্রথম বিয়ের কথা আমাদের জানায়নি মিন্নি ও তার পরিবার।’

গতকাল শনিবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে মিন্নি ও রিফাত শরীফের বিয়ের বিষয়ে এসব কথা বলেন রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ।

এদিকে নয়ন বন্ডের সাথে মিন্নির প্রথম বিয়ের সকল তথ্য উপাত্ত প্রকাশ হওয়ার পর, এখনও মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করছে মিন্নির পরিবার।

জানা যায়, বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মালার প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী মিন্নি দ্বিতীয় বিয়ের সময়ও নিজেকে কুমারী পরিচয় দেন।

বরগুনার কেন্দ্রীয় কাজী অফিসের কাজী আবদুর রহিমের ছেলে মো. শহিদ বলেন, ‘গত ২৬ এপ্রিল প্রায় দুই শতাধিক লোকের উপস্থিতিতে বরগুনার আলীয়া মাদ্রাসা মসজিদে মিন্নি ও রিফাতের বিয়ে সম্পন্ন হয়। তাদের বিয়ে পড়ান আলীয়া মাদরাসা মসজিদের ইমাম ক্বারী সোলায়মান। ছয় লাখ টাকা দেনমোহরের এই বিয়েতে কন্যাদান করেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। তিনি আরও বলেন, বিয়ের কাবীন নামায় মিন্নিকে কুমারী হিসেবে দেখানো হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে শহিদ বলেন, ‘প্রথম বিয়ের পর যদি কোনো নারীর ডিভোর্স হয়, কিংবা স্বামী মারা যায়, ওই নারীর দ্বিতীয় বিয়ের সময় কাবিন নামায় তাকে তালাকপ্রাপ্ত কিংবা বিধবা হিসেবে উল্লেখ করতে হয়। মিন্নির কোনো স্বজনই মিন্নির যে আগে বিয়ে হয়েছিল- এটা না বলায় কাবিননামায় মিন্নিকে কুমারী হিসেবে দেখানো হয়েছে।’

এ ব্যাপারে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘আমার মেয়ের একটাই বিয়ে হয়েছে। এবং সেই বিয়ে হয়েছে রিফাত শরীফের সাথে। ছয় লাখ টাকা দেনমোহরে গত ২৬ এপ্রিল বরগুনার আলীয়া মাদরাসা সংলগ্ন মসজিদে আমার মেয়ে মিন্নির বিয়ে হয়। আমার মেয়ের আর কোনো বিয়ে হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেশকিছু দিন আগে নয়ন বন্ড আমার মেয়েকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে একটি কাগজে স্বাক্ষর নেয়। সেই কাগজ দিয়ে নয়ন কী করেছে সে বিষয়ে আমরা অবগত নয়।’

মিন্নির বাবা আরও বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমার মেয়ে ভয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। তাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য ঢাকা নিয়ে গিয়েছিলাম। তাছাড়া এ ঘটনা জানালে আমার ছেলেকে হত্যা করা হবে- নয়ন বন্ডের এমন হুমকির কারণে মিন্নি আমাদের এ ঘটনা পরে জানায়। এ কারণে আমরা আইনি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি।’

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে স্ত্রী মিন্নির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ওইদিনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা ভাইরাল হয়ে যায়।

নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।

রিফাত হত্যাকাণ্ডের পরের দিন অর্থাৎ ২৭ জুন মিন্নি গণমাধ্যমের কাছে কাঁদতে কাঁদতে দাবি করেন, আমার চোখের সামনেই আমার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারা। অনেক চেষ্টা করেও স্বামীকে বাঁচাতে পারিনি আমি। আমি তাদের বিচার চাই।

গত শুক্রবার থেকে রিফাত ও মিন্নির বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, মিন্নি এ মামলার প্রধান সাক্ষী। তার নিরাপত্তার জন্য তার বাড়ির বাইরে পুলিশ রাখা হয়েছে।

দেশব্যাপী আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। ওইদির ভোররাতে বরগুনার পুরাকাটা এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নয়ন বন্ডের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন।