রাজশাহীর সময় ডেস্ক : মহাকাশ নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। গত পাঁচশো বছরে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ডানায় ভর দিয়ে আমরা মহাবিশ্বের বেশ কিছু জটিল ধাঁধার সমাধান করে ফেললেও, থেমে গিয়েছিলাম একটি মাত্র জায়গায়। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক এই দোলাচালে রয়েছি এখনও। সহজ উত্তর না মেলায় তাই সায়েন্স ফিকশন ও সিনেমার পর্দায় এই একটি ধাঁধার সহজ ও অবৈজ্ঞানিক সমাধান করতে চেষ্টা করেছি যুগ যুগ ধরে। কল্পনার চোখে দেখেছি, ভিনগ্রহ থেকে উড়ন্ত চাকতির মতো মহাকাশযানে চড়ে পৃথিবীর নির্জন প্রান্তরে নেমে আসে এরা। এদের শরীর মানুষের মত, প্রকান্ড মাথার নিচে ছোট ধড়, সরু লিক লিকে হাত পা, বড় বড় টানা টানা কালো চোখ। এরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও প্রযুক্তির দিক থেকে আমাদের চেয়ে কয়েক আলোকবর্ষ এগিয়ে। এরা পৃথিবী থেকে অনেক দূরে থাকা গ্রহের বাসিন্দা। পৃথিবীর মানুষ ১৯৭৯ সালের হলিউডি মুভি Alien দেখে এদের নাম দিয়েছে ‘এলিয়েন‘। গত একশো বছর ধরে এই কাল্পনিক ভিনগ্রহবাসীদের নিয়ে পৃথিবীবাসীদের কৌতূহল ও উন্মাদনা চুড়ান্ত জায়গায় পৌঁছে গেছে। বর্তমান পৃথিবীর প্রতি পাঁচজন মানুষের মধ্যে একজন মানুষ,এই এলিয়েনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন।
আমেরিকার কর্নেল ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ড্রাক, সর্বপ্রথম সৌরজগতের বাইরের বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে এলিয়েনদের সঙ্গে যোগাযোগ করার লক্ষ্যে, ১৯৬০ সালে Project Ozma শুরু করেন। এখনও পৃথিবীর অনেক দেশে সেই ‘Project Ozma‘ চলছে। কিন্তু এখনও এলিয়েনদের রেডিও সঙ্কেত ধরা পড়েনি। এলিয়েনদের ব্যাপারে প্রথম থেকেই মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত ও সমাদৃত মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। পৃথিবীর মানুষ হন্যে হয়ে জানতে চেয়েছিল E.T ( extra terrestrial) ও UFO (Unidentified flying object) নিয়ে নাসার বক্তব্য ঠিক কী! তবে, নাসার উত্তর না পেয়ে মানুষ ভেবেছে, হয় নাসা হাত গুটিয়ে বসে আছে , না হয় তারা এলিয়েনদের বুদ্ধিমত্তার কাছে হার স্বীকার করে নিয়েছে।
২০১৫, নাসার বিজ্ঞানী অ্যালেন ঘটালেন প্রথম বিস্ফোরণ
চমকে গিয়েছিল বিশ্ব। নাসার প্রথম সারির বিজ্ঞানী অ্যালেন স্টেফান এক আলোচনা সভায় চমক লাগিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আগামী এক দশকের মধ্যে আমরা ভিনগ্রহের বাসিন্দা বা এলিয়েনদের খোঁজ পেয়ে যাব। এবং সেটি হবে সাম্প্রতিককালের সেরা আবিষ্কার। আমরা জানি তারা কোথায় আছে ও কী ভাবে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে। নাসার হাতে সেই প্রযুক্তি আছে এবং তার ব্যবহারও শুরু করা হয়ে গেছে। এবং আমি মনে করছি, আমরা ঠিক পথেই এগিয়ে চলেছি।’ সারা বিশ্বে হই চই শুরু হয়ে গিয়েছিল, কারণ এটা ঠিক যে নাসার প্রথম সারির বিজ্ঞানী অ্যালেন, সায়েন্স ফিকশন লেখকদের মতো আলটপকা ও অবৈজ্ঞানিক মন্তব্য করবেন না। নাসার বিজ্ঞানীরা জানেন বিশ্বের কাছে নাসার মহাকাশ সম্বন্ধীয় বাক্য মানেই বেদবাক্য।
২০১৭, পৃথিবীর বিখ্যাত হ্যাকার সংস্থা ‘অ্যানোনিমাস’ ঘটালো দ্বিতীয় বিস্ফোরণ
‘অ্যানোনিমাস’ দাবি করেছিল, গোটা বিশ্বকে চমকে দিতে চলেছে নাসা। এলিয়েনদের নিয়ে বড়সড় ঘোষণা করতে চলেছে তারা। এখন গোপনে চলছে তার প্রস্তুতি। হ্যাকার সংস্থাটি তাদের তৈরি করা একটি ভিডিওতে দাবি করেছিল, ‘নাসা বলছে এলিয়েনরা আসছে!’ এবং নাসার বিজ্ঞানী থমাস জুরবিউকেন বলেছেন, ‘নাসার সাম্প্রতিক কিছু আবিষ্কারই বলে দিচ্ছে, আমরা এলিয়েনদের অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গেছি”।
ডিসেম্বর ২০১৮, নাসার সেরা বিজ্ঞানী সিলভানো ঘটালেন তৃতীয় বিস্ফোরণ
মহাকাশ গবেষণা এক চাঞ্চল্যকর মোড় নিল এই ক’দিন আগে। নাসার Ames Research Centre -এর বিজ্ঞানী সিলভানো পি কলম্বানো হলেন নাসার একজন সেরা বিজ্ঞানী। তিনি, SET(Search for Extraterrestrial Intelligence) এর অংশ হিসাবে ভীনগ্রহের প্রাণীদের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তিনি তাঁর গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন এমন চাঞ্চল্যকর কিছু কথা, যা নিয়ে তোলপাড় গোটা বিশ্ব।
● এলিয়েন বা ভিনগ্রহের বাসিন্দারা সম্ভবত অনেক আগেই পৃথিবী ঘুরে গেছে।
● বুদ্ধিমান এলিয়েনরা মানুষের মতো কার্বন অণু দিয়ে তৈরি নাও হতে পারে। আমরা হয়তো এই কারণে তাদের দেখতে পাইনি বা পাচ্ছি না।
● আমি একটি বাস্তব সত্যকে সামনে আনতে চাই, আমরা ভিনগ্রহে যে বুদ্ধিমত্তা খুঁজছি, হতে পারে সেটা আমাদের মতো কার্বন কণা দিয়ে তৈরি জীবদেহের বুদ্ধিমত্তা নয়। তাদের দেহ অন্য কোনও পদার্থের অণু দিয়ে তৈরি হতে পারে। ভিনগ্রহের বাসিন্দারা হতে পারে অতি ক্ষুদ্র এবং অতি বুদ্ধিমান জীব। নতুন দিকে ভাবার সময় এসেছে।
● পৃথিবীর মানুষরা হয়তো টেরই পাচ্ছেন না এলিয়েনরা ভিনগ্রহ থেকে পৃথিবীতে অনেক দিন আগে থেকেই যাওয়া আসা করছে। হয়তো তারা এমন উপাদানে তৈরি যা মানুষ খালি চোখে দেখতে পায় না।
● মানব সভ্যতায় প্রযুক্তির বয়স খুব বেশি হলে ১০,০০০ বছর। বিজ্ঞানের methodology ( প্রণালী বিজ্ঞান) -এর বয়স মাত্র ৫০০ বছর। এর অনেক আগেই এলিয়েনরা গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে যাওয়ার আধুনিকতম প্রযুক্তি আবিষ্কার করে ফেলেছে। এদের সভ্যতা মানব সভ্যতা থেকে হয়তো অনেক অনেক পুরোনো।
বিজ্ঞানী সিলভানো পি কলম্বানোর গবেষণা ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে। পৃথিবী জুড়ে বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানপ্রেমীদের মধ্য চলছে তুমুল আলোচনা। অনেকে মনে করছেন, নাসার এই প্রথিতযশা ও প্রথম সারির বিজ্ঞানীর গবেষণাপত্রটি প্রমান করে নাসা ও নাসার বিজ্ঞানীরা এলিয়েনদের একেবারে কাছে পৌঁছে গেছেন।
বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং আগেই বলেছিলেন
এলিয়েন আছে, অবশ্যই আছে। প্রকান্ড এই মহাবিশ্বে লক্ষ লক্ষ কোটি গ্রহ-নক্ষত্র-ছায়াপথ, এদের মধ্যে কি কোথাও নেই প্রাণ বা আমাদের মতো বুদ্ধিমান প্রাণী! আমি নিশ্চিত, আমরাই তাদের খুঁজে পাচ্ছি না। তবে আমি বিশ্বাস করি এলিয়েনদের একদিন খুঁজে পাওয়া যাবেই। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং-এর মতে ভিনগ্রহের প্রাণীরা দেখতে সম্পূর্ণ অন্যরকম হতে পারে। যা আমাদের কল্পনাতীত, এমনকি তারা তরল বা গ্যাসীয় পদার্থের মতো আকারেরও হতে পারে।
নাসা মেনে নিলো এলিয়েনরা আছে
সর্বশেষ তথ্য কী!
● নাসার গবেষকেরা কেপলার টেলিস্কোপের সাহায্যে এমন ২০টি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন, যাদের মধ্যে সম্ভবত প্রাণ আছে।
● বৃহস্পতির বরফাচ্ছাদিত চাঁদ ইউরোপা। নাসা হঠাৎ করেই সেখানে প্রচুর রোভার পাঠাতে শুরু করেছে। বিশ্বের বিজ্ঞানপ্রেমীদের একাংশ বলছেন, নাসা এখানেই খুঁজে পেয়েছে এলিয়েনদের সভ্যতা।
● আমাদের পৃথিবী যে ছায়াপথে আছে, সেই মিল্কি-ওয়ে গ্যালাক্সিতেই এলিয়েন বা ভিনগ্রহবাসীর অস্তিত্বের অসংখ্য চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ‘স্পেস ডটকম‘-এর মতো সংস্থা।
● হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেদের চাঞ্চল্যকর দাবি , তাঁরা নাকি ভিনগ্রহ থেকে মহাকাশে ছুঁড়ে দেওয়া জটিল গাণিতিক নকশার রেডিও সঙ্কেত ধরতে পেরেছেন। এই সংকেত দিচ্ছে ভিনগ্রহবাসীরা।
নাসার একের পর এক সেরা বিজ্ঞানীরা কেন এতো জোর দিয়ে এলিয়েনের অস্তিত্বকে স্বীকার করছেন? তাঁরা কি এলিয়েনের সন্ধান পেয়ে গেছেন? কেন বিভিন্ন সূত্রে উঠে আসছে ২০২৫-এর কথা? আর মাত্র ৭ বছরের অপেক্ষা? জানি না আপনাদের কী মনে হচ্ছে, আমার কিন্তু মোটেই অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।